সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের নামে মুর্শিদাবাদ জেলার নানা প্রান্তে যেভাবে হিংসা ছড়িয়েছে, তার জেরে এখনও পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। নিহতদের মধ্যে দু'জন হিন্দু এবং তাঁরা সম্পর্কে বাবা ও ছেলে - হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস। তাঁদের বাড়ি থেকে বের করে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। অন্যদিকে দাবি করা হয়, পুলিশের গুলিতে জখম হওয়া সংখ্যালঘু কিশোর ইজাজ আহমেদও পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন অবস্থায় মারা যায়।
এই প্রেক্ষাপটে আক্রান্ত ও নিহত দুই হিন্দুর মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ যে 'হিন্দু শহিদ দিবস' পালন করা হবে, সেকথা আগেই ঘোষণা করেছিল রাজ্য বিজেপি। নিজেদের এক্স হ্যান্ডেলে তার ভার্চুয়াল প্রচারও করেছিল তারা। সেই মতো এদিন সেই কর্মসূচি পালন করার সময়েই ফের একবার মুর্শিদাবাদ ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের নেতাদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এদিন শুভেন্দু অধিকারী-সহ অন্য বিজেপি বিধায়করা সাদা-কালো পোশাক পরে এবং হাতে কালো পতাকা ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিধানসভার বাইরে জমায়েত করেন। সেই জমায়েত থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলে একের পর এক তোপ দাগেন শুভেন্দু।
এদিন প্রথমে বিধানসভার বাইরে একটি অস্থায়ী শহিদ বেদী নির্মাণ করা হয়। সেখানে শুভেন্দু-সহ অন্যরা মুর্শিদাবাদে নিহত দুই হিন্দু বাসিন্দার স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
তারপরই শুভেন্দু বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সংখ্যালঘুরা মূলত কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। সেই ভোট তৃণমূলে টানতেই রাজ্য়ের শাসকদল মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনা ঘটিয়েছে! এর জন্য সরাসরি মমতাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন শুভেন্দু।
তিনি বলেন, 'ওঁর ফরাক্কার এমএলএ-র দাদা, ওঁর সামশেরগঞ্জের এমএলএ, ওঁর ধুলিয়ানের চেয়ারম্যান, তাঁরা কী করেছেন, আমরা ভিডিয়ো দিয়ে প্রমাণ করেছি।' এনআইএ তদন্ত হলেই সবটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। অর্থাৎ - সামগ্রিকভাবে মুর্শিদাবাদের হিংসার ঘটনার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বকেই দায়ী করেন শুভেন্দু। একইসঙ্গে, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোলেন মিথ্যাচারের অভিযোগ।
এদিনের এই কর্মসূচি ঘিরে প্রতিবাদী বিজেপি বিধায়করা ফের একবার প্রকাশ্যেই মেরুকরণের রাজনীতিতে শান দেন। তাঁদের মুখে স্লোগান শোনা যায় - 'দুনিয়ার হিন্দু এক হও', 'বাংলার হিন্দু এক হও', 'চোর মমতা হায় হায়', 'খুনিদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা হায় হায়', 'খুনি মমতার বিরুদ্ধে লড়তে হবে একসাথে', 'পুলিশ মন্ত্রী হায় হায়' ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদে বাবা ও ছেলেকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় ইতিমধ্য়েই আলাদাভাবে তদন্ত করেছে সিট। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে একাধিক দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গতকাল জানা যায়, সেই ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সম্পর্কে একে অপরের ভাই। তাদের একজনকে মুর্শিদাবাদের সুতি এবং অন্যজনকে বীরভূমের মুরারই থেকে পাকড়াও করেছে পুলিশ।