• ‘খবরটা শুনে স্কুলের গেট থেকে…’, মন খারাপ পড়ুয়াদের, হতাশ স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মালদার শিক্ষকও
    এই সময় | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না, কিন্তু সেটা বাধা হয়নি। ছোট থেকেই মেধা ছিল ভরপুর। মালদা কলেজ থেকে স্নাতক এবং গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক স্তরে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বর্ণপদকও পান। আপার প্রাইমারি, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শিক্ষক পদে তিনটি বিভাগের পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছিলেন। শেষটিকেই বেছে নিয়েছিলেন। চাকরি যাওয়ার খবর পাওয়া মাত্র স্কুলের গেট থেকে ফিরে চলে যান পড়ুয়াদের প্রিয় শিক্ষক।

    ইংরেজবাজার ব্লকের সাতটারি গ্রামের বাসিন্দা সামাদ মিয়া শোভানগর হাই স্কুলের অঙ্ক বিষয়ের শিক্ষক। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ই বাবার মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই লড়াইটা শুরু। লড়াইয়ে সাফল্য আসে ২০১৬ সালে। এত বছর চাকরি করার পরেও যে তাঁকে ‘বরখাস্ত’ হতে হবে, সেটা কল্পনাতেও ভাবেননি। স্কুলের ‘প্রিয় স্যর’ কেন আসছেন না বলে বেজায় মন খারাপ পড়ুয়াদেরও। প্রায়শই ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন অন্যান্য শিক্ষকেরাও। 

    স্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিস্বামী দাস জানান, স্কুলে ৩০ জন শিক্ষকের মধ্যে চার জন শিক্ষকের চাকরি আর নেই। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সব মিলিয়ে তিন হাজার। তিনি বলেন, ‘সামাদ মিয়া শিক্ষক হিসেবে খুব ভালো ছিলেন। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দারুণ পড়াতেন। আজকে স্কুলে না আসাতে ছাত্রছাত্রীরা পঠনপাঠন-এর ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন। শুধু শিক্ষক হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা বাদ দিয়েও স্কুলের বেশিরভাগ সরকারি কাজ তিনি দেখাশোনা করতেন। মাইনরিটি স্কলারশিপ, অলিম্পিয়াড পরীক্ষা দেখাশোনা করা। ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষভাবে কোচিং দেওয়া সব ক্ষেত্রেই তাঁর দক্ষতা ছিল।’

    চাকরি হারিয়ে সামাদ মিয়া বলেন, ‘সকলেই আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু আমি আশ্বস্ত হতে পারছি না। আমরা তো যোগ্য, আমাদের কেন চাকরি গেল? সরকার যত দিন না আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দিচ্ছে, যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা আলাদা করছে, আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ 

    বাড়িতে একমাত্র তিনি চাকরিজীবী। তাঁর আয়ের উপরেই গোটা সংসারটা  নির্ভরশীল। বর্তমানে বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা, বড় দাদা, দুই ভাই, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর এক মেয়ে। বড় দাদা সিভিক ভলেন্টিয়ার। দুই ভাই বেকার। মা শারীরিকভাবে অসুস্থ। মার্চ মাসের বেতন তো পেয়েছেন। এপ্রিল মাসটা গেলে সংসার চলবে কী করে? উত্তর নেই। 

  • Link to this news (এই সময়)