অক্ষয় তৃতীয়ার দিন, ৩০ এপ্রিল দিঘায় জগন্নাথধামের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই দিনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্য প্রান্তে সনাতনী সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য সরকার যেমন দিঘায় মন্দির উদ্বোধনের যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে, তেমনই দক্ষিণ কাঁথিতে সনাতনী সম্মেলনের আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে জোরকদমে। সরাসরি ওই কর্মসূচির সঙ্গে বিরোধীদল বিজেপির যোগাযোগ না থাকলেও আয়োজনের যাবতীয় দায়িত্বে রয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর দফতর। ‘সহযোগী’ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপকুমার দাস। শুভেন্দু জানিয়েছেন, ওই দিন সনাতনী সমাজের প্রতিনিধিরা তাঁদের মতামত প্রকাশ করবেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ২০১৮ সালে দিঘায় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে একটি জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের ঘোষণা করেছিলেন । ওই প্রকল্পের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের অক্ষয় তৃতীয়ায় । চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হবে ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ার দিন। ২৭ এপ্রিল থেকেই দিঘা শহরে মন্দির উদ্বোধনের প্রস্তুতি শুরু হবে প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে।
গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিপর্যয়ের পর ‘কট্টর’ হিন্দুত্বের লাইন নিয়ে এগোতে শুরু করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তাই মুখ্যমন্ত্রীর মন্দির উদ্বোধনের ‘পাল্টা’ সনাতনী কর্মসূচি করতে চাইছেন তিনি। কাঁথি লোকসভার অধীন রামনগরের দিঘায় যখন মুখ্যমন্ত্রী মন্দিরের উদ্বোধন করবেন, তার কাছাকাছি সময়েই কয়েক হাজার গেরুয়াধারী সন্ন্যাসীকে নিয়ে সনাতনী সম্মেলন ডেকেছেন শুভেন্দু। ওই সম্মেলনে কয়েক লক্ষ মানুষের খাওয়াদাওয়া ও যোগদানের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
বিজেপি পরিষদীয় দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল, ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে রাজ্যের দু’-তিনটি জেলায় অশান্তির আবহে রাজ্য সরকারের উপর আরও ‘চাপ’ তৈরি করতে চাইছেন শুভেন্দু। তাই মুখ্যমন্ত্রী কোনও কর্মসূচি করলেই একই দিনে পাল্টা কর্মসূচি করে ‘জবাব’ দিচ্ছেন শুভেন্দু। সুপ্রিম কোর্ট প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দেওয়ার পরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। একই দিনে বিধানসভার বাইরে বিধায়কদের নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি করেছিলেন বিরোধী দলনেতা। আবার বুধবার নেতাজি ইন্ডোরেই মুখ্যমন্ত্রী যখন ইমাম-মোয়াজ্জিমদের ডাকা সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়ে ওয়াকফ আইন নিয়ে বক্তব্য পেশ করছেন, ঠিক সেই সময়েই নেতাজি ইন্ডোরের উল্টোদিকে বিধানসভার বাইরে বিরোধী দলনেতা বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে বিধানসভার বাইরে পাল্টা কর্মসূচি পালন করেছেন। এক বিজেপি বিধায়কের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা ময়দান দিতে চান না শুভেন্দুদা। তাই যে দিনই মুখ্যমন্ত্রী বড় কর্মসূচি করে নিজের কথা বলেন, সে দিনই পাল্টা বক্তব্য পেশ করে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ শানাচ্ছেন তিনি। সে পথেই দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের দিন একই জেলায় সনাতনী সম্মেলন ডেকেছেন তিনি।’’