• ডিওয়াইএফআই-এর কর্মসূচির প্রচারে এবিভিপির আন্দোলনের ছবি! ধরা পড়তেই সরল পোস্ট, ‘ভ্রান্তি’র দায় নিচ্ছে না সিপিএম
    আনন্দবাজার | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • সমাজমাধ্যমে বিড়ম্বনা কাটতেই চাইছে না সিপিএমের। দলের ফেসবুক পেজের ডিপিতে নীলসাদা রঙের আধিপত্য এনে গত মার্চে কটাক্ষের মুখে পড়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন শাসক দল। এক মাস কাটার আগেই তাদের যুব সংগঠন অস্বস্তিতে পড়ল এবিভিপি (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ)-র আন্দোলনের ছবি নিজেদের বলে চালিয়ে দিয়ে। এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন) ভবন অভিযানের প্রচার চালাতে গিয়ে এই ‘কাণ্ড’ ঘটিয়েছে ডিওয়াইএফআই। বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে নিজেদের সমাজমাধ্যম পাতা থেকে তারা ভিডিয়োটি সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এবিভিপি সমাজমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তার আগেই প্রচার শুরু করে দিয়েছিল। ফলে ‘ভ্রান্তি’ চাপা থাকেনি। বিষয়টি নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব ডিওয়াইএফআইয়ের উপর বিরক্ত বলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে খবর।

    শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে আগামী ১৭ এপ্রিল এসএসসি ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছে ডিওয়াইএফআই। সমাজমাধ্যমে তার প্রচারও চালানো হচ্ছে। সেই প্রচারের অঙ্গ হিসেবেই পশ্চিমবঙ্গ ডিওয়াইএফআই-এর ফেসবুক পেজে বুধবার সকালে একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি বেশ কয়েকটি আলাদা আলাদা প্রতিবাদ কর্মসূচির ভিডিয়ো এবং স্থির ছবির সমাহারে তৈরি। সেই সব কর্মসূচিতে সিপিএম বা তার নানা গণসংগঠনের অংশগ্রহণ বা সমর্থন ছিল। কিন্তু সে সব ছবি ও ভিডিয়োর মাঝেই আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপির কর্মসূচির ছবিও ব্যবহার করা হয়। এপ্রিলের শুরুর দিকে এবিভিপি বিকাশ ভবন অভিযান করেছিল। বিকাশ ভবনের প্রবেশপথ থেকেই বিক্ষোভকারীদের পুলিশ গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এবিভিপির কলকাতা মহানগর কমিটির ছাত্রী আহ্বায়ক তথা রাজ্য কর্মসমিতির সদস্যা শিল্পা মণ্ডল। সেই শিল্পার গ্রেফতারির মুহূর্তের ছবিই নিজেদের কর্মসূচির প্রচারে ডিওয়াইএফআই ব্যবহার করে।

    সিপিএমের যুব সংগঠনের সমাজমাধ্যম পোস্টে নিজেদের কর্মসূচির ছবি দেখেই কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়ে এবিভিপি। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক অনিরুদ্ধ সরকার, মহানগর সম্পাদক দেবাঞ্জন পাল-সহ একের পর এক পদাধিকারী ডিওয়াইএফআই-এর পোস্টটি শেয়ার করতে শুরু করেন। পোস্টটির উপরে তাঁরা লিখতে শুরু করেন, ‘‘ডিওয়াইএফআই-এর ফেসবুক পেজ থেকে এবিভিপির বিকাশ ভবন অভিযানের ছবি নিয়ে প্রচার! দৈন্য কোন স্তরে পৌঁছলে এটা সম্ভব!’’

    ‘ভ্রান্তি’র কথা জানতে পেরে স্বাভাবিক কারণেই অস্বস্তি বৃদ্ধি পায় সিপিএমের যুব সংগঠনের। পোস্টটি তাঁরা নিজেদের ফেসবুক পেজ থেকে সরিয়ে দেন। কিন্তু বিতর্ক শুরু হলেই যে ডিওয়াইএফআই পোস্টটি ডিলিট করতে পারে, সে কথা মাথায় রেখে পোস্টটির স্ক্রিনশটও নিয়ে রেখেছিলেন এবিভিপি কর্মীরা। সেই স্ক্রিনশটও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়।

    এই রকম ঘটনা কী ভাবে ঘটল, তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য সিপিএমের যুব সংগঠনের কাছ থেকে মেলেনি। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তারও জবাব দেননি। ডিওয়াইএফআই-এর তরফ থেকে কোনও প্রকাশ্য ব্যাখ্যাও কোথাও দেওয়া হয়নি। তবে ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছেন যে, বিষয়টি তাঁর নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মিনাক্ষীকে জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ মিনাক্ষী এই ‘ভ্রান্তি’ সম্পর্কে অবহিত। আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, এই ঘটনা নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব যুব সংগঠনের উপরে বিরক্ত। সিপিএম সূত্রের দাবি, দলের যে সমাজমাধ্যম ‘টিম’ রয়েছে, তার সঙ্গে ডিওয়াইএফআই-এর সমাজমাধ্যম ‘টিমের’ কোনও ‘আনুষ্ঠানিক বাঁধুনি’ নেই। যুব সংগঠন নিজেদের পেজটি নিজেদের মতো করেই চালায়। তাই এই ‘ভ্রান্তি’র দায় সিপিএমের সমাজমাধ্যম ‘টিম’ নিতে চাইছে না।

    এবিভিপির দাবি, এটা শুধু ‘ভ্রান্তি’ নয়, সিপিএমের যুব ও ছাত্র সংগঠনের ‘দুর্বলতা’র লক্ষণ। রাজ্য সম্পাদক অনিরুদ্ধের কথায়, ‘‘মহানগরে হোক বা জেলায়, ডিওয়াইএফআই বা এসএফআই-এর এখন আর কোনও সংগঠন নেই। শুধুমাত্র নিজেদের ব্যানারে কোনও কর্মসূচির ডাক দিয়ে তারা ভিড় জমাতে পারে না।’’ অনিরুদ্ধের কথায়, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে এসএফআই-ডিওয়াইএফআই যে সব কর্মসূচি করে, সেখানে তা-ও দেখানোর মতো একটা সংখ্যা একত্রিত হয়। তা না-হলে ওদের অবস্থা কতটা করুণ, সেটা এই পোস্ট থেকেই আবার প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)