• ফেডারেশন বিরোধী হলেই কাজে কোপ? সুদেষ্ণার শুটিং বন্ধ! কী বলছেন টলিপাড়ার বাকিরা?
    আনন্দবাজার | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায়ের পর সুদেষ্ণা রায়। বছরের শুরু থেকে কারণে-অকারণে শুটিং বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই চার পরিচালকের। আড়ালে বলাবলি চলছে, কলকাঠি নাড়ছেন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। পরিচালক-ফেডারেশন কাজিয়া অবশ্য নতুন নয়। বহু বছর ধরে এই সমস্যা। পরিচালকদের অভিযোগ, সমস্ত বিষয়ে ফেডারেশনের অকারণ হস্তক্ষেপে তাঁরা কাজ করতেই পারছেন না। বিষয়টি কলকাতা হাই কোর্টের নজরে এনে পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্য একটি মামলাও দায়ের করেছেন। পরে তাঁকে সমর্থন জানান পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, সুব্রত সেন, সুদেষ্ণা রায়, অয়ন সেনগুপ্ত-সহ আরও ১৫ জন পরিচালক। ইতিমধ্যেই সেই মামলায় দু’টি শুনানি হয়ে গিয়েছে। আগামী শুনানি ১৯ মে।

    তার আগে, বুধবার লাইভ সম্প্রচারে এসে সুদেষ্ণা জানান, শুক্রবার তাঁর আগামী ছবির শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একের পর এক টেকনিশিয়ান শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ানোয় তিনি শুটিং বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

    তা হলে কি ফেডারেশন বিরোধী হলেই কাজে কোপ পড়বে? মামলা চলাকালীনও কি ফেডারেশন এ রকম পদক্ষেপ করতে পারে? জানতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল বিদুলা, পরমব্রত, অয়নের সঙ্গে। কী বলছেন তাঁরা?

    সুদেষ্ণার বিরুদ্ধে ফেডারেশনের এই পদক্ষেপ একেবারেই মানতে পারছেন না পরমব্রত। পরিচালক অভিনেতার কথায়, “সুদেষ্ণাদির ছবির কলাকুশলীরা যদি কাজটা না-ই করবেন, তা হলে ওঁরা কেন প্রাক-প্রযোজনায় যোগ দিয়েছিলেন? লুক সেটেও অংশ নিয়েছিলেন তো! এর থেকেই স্পষ্ট, ওঁরা কারও নির্দেশে কাজ থেকে সরে দাঁড়ালেন।”

    পরমব্রত আরও বলেছেন, “আমরা ফেডারেশনের কর্মপদ্ধতি এবং ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম গত বছর| মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেটা হয়নি। তার পর থেকেই দেখি, নানা ভাবে আমাদের নিশানা করা হয়েছে।” শুধু তা-ই নয়, কখনও পরিচালকদের সদস্যপদ এবং স্বাস্থ্যবিমা পুনর্নবীকরণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ| বার বার আলোচনা করতে চেয়েও কোনও সদুত্তর মেলেনি| বাধ্য হয়ে পরিচালকেরা আদালতের দ্বারস্থ হন।

    পরিচালক-অভিনেতার প্রশ্ন, হাই কোর্টের নির্দেশ কি টেকনিশিয়ানদের জানানো হয়নি? না কি তাঁরা বুঝতে পারেননি? তাঁর আফসোস, বুঝলে এই পদক্ষেপ হয়তো তাঁরা করতেন না। আজকের ঘটনায় কিন্তু এই কলাকুশলীরাও কাজ হারালেন! ভেবেও খারাপ লাগছে তাঁর।

    সুদেষ্ণা রায়ের শুটিং আটকে যাওয়ার ঘটনায় বিদুলা খুব বিস্মিত নন। তাঁর কথায়, “আমাদের আশঙ্কা ছিল, এ রকমই কিছু একটা ঘটবে। ফেডারেশন এত সহজে নত হবে, কেউই আশা করিনি।” পাশাপাশি, হাই কোর্টের দ্বিতীয় শুনানিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ফেডারেশন কোনও ভাবে পরিচালকদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তার পরেও টেকনিশিয়ানরা যদি নিজে থেকে কাজ ছেড়ে চলে যান মানে তাঁদের আদালতের নির্দেশের অর্থ বোঝানো হয়নি। অথবা তাঁরা বুঝতে পারেননি। বিদুলার আরও বলেন, “আমরা অবশ্য ভয় পাচ্ছি না। জানি, এই ধরনের লড়াই একদল লড়েন। তাঁরা ন্যায় ছিনিয়ে আনেন, সুফল ভোগ করেন বাকিরা। আমাদের ক্ষেত্রেও সেটাই হবে।” পরবর্তী মামলার শুনানির আগে ফেডারেশনের এই পদক্ষেপ কি তাদের বিপক্ষে যাবে? “অবশ্যই”, বললেন বিদুলা।

    প্রায় একই কথা বলেছেন পরিচালক অয়ন। তিনিও ফেডারেশনের কারণেই কাজ হারিয়ে রাস্তায় খাবারের দোকান চালাতে বাধ্য হয়েছেন। তিনিও টেকনিশিয়ানদের প্রতি সহমর্মী। আফসোস, “ওঁরা জানেন না, ওঁরা কী ভুল করছেন। আদালতের নির্দেশ ঠিকমতো বুঝলে হয়তো করতেন না এটা।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)