• জঙ্গলপথ পেরতে গেলেই বন্ধ বাইক, শরীরে আঁচড় অশরীরীর! ‘ভূতে’র ভয়ে কাঁটা পুরুলিয়া
    প্রতিদিন | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাস্তা দিয়ে পার হলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাইক। কিছুতেই আর সেই বাইক স্টার্ট করা যাচ্ছে না। আর তখনই পিছন থেকে কে যেন জড়িয়ে ধরছে। কিন্তু চোখে দেখা যাচ্ছে না। সারা শরীরে আঁচড় দিয়ে যাচ্ছে। দু’সপ্তাহেরও বেশি সময়ে এমন অলৌকিক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন প্রায় ৩-৪ জন। আর তাতেই ভূতের আতঙ্ক চেপে বসেছে পুরুলিয়ার হুড়া থানার অর্জুনজোড়া গ্রাম এলাকায়। অর্জুনজোড়া-কেশরগড় যাওয়ার রাস্তায় ওই অর্জুনজোড়া থেকে এক কিমি দূরে জঙ্গল এলাকায় এমন ঘটনা ঘটছে। তার জেরে চৈত্র সংক্রান্তিতে গাজন মেলাও জনশূন্য হয়ে গেল। অর্জুনজোড়া প্রাথমিক থেকে হাইস্কুলেও ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতির সংখ্যা কমে এসেছে। একটি বেসরকারি স্কুলের হস্টেল প্রায় ফাঁকা।
    যদিও পুরুলিয়া বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য নয়ন মুখোপাধ্যায় এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। ভূত দেখাতে পারলে ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন তিনি।

    বিকালের পর তো দূর অস্ত। দিনের বেলাতেও ওই পথ দিয়ে যাচ্ছেন না ওই এলাকার মানুষজন। ভূত আতঙ্কে ঘুরপথে যাতায়াত চলছে তাদের। যারা এমন অলৌকিক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন তারা এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন যে ওঝা, গুরুবাবার দ্বারস্থ হয়েছেন। আর এই ভূতের ভয় কাটাতেই গত বুধবার বিকালে ওই গ্রাম এলাকায় যান পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চে পুরুলিয়া জেলা কমিটির তিন প্রতিনিধি। গ্রামে গিয়ে বোঝান এরকম ভূত বলে কোন কিছু নেই। কিন্তু তাতে গ্রামের মানুষজন বিশ্বাস করলে তো! বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা ওই গ্রামে জানিয়ে এসেছেন, এই ভূতের গুজব যারা রটাবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আপাতত ওই পথে ভূতের ভয় কাটাতে হুড়া থানা থেকে দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকে মোতায়ন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা গ্রামের মানুষজনকে গিয়ে বুঝিয়েছি। এইসব ভূত-প্রেত বলে কিছু হয় না। যারা ভূতের গুজব ছড়াবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

    এই ঘটনার সূত্রপাত প্রায় সপ্তাহ তিনেক আগে। ওই এলাকার ১৭ বছরের যুবক ঠিক ওই অর্জুনজোড়া জঙ্গল এলাকায় আত্মহত্যা করেন। তার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আর ওই ঘটনার তিন-চার দিন পর থেকেই এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটছে বলে গ্রামের মানুষজন এদিন বিজ্ঞান মঞ্চকে জানান। তবে সবার প্রথমে ওই অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী
    অর্জুনজোড়া গ্রামের বাসিন্দা জলধর গড়াই বলেন, “সপ্তাহখানেক আগেকার ঘটনা। বিকাল তিনটা নাগাদ ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে ওই সড়কপথে আমার বাইক বন্ধ হয়ে যায়। আমি স্টার্ট দিতে গেলেও কিছুতেই স্টার্ট হচ্ছিল না। তার মধ্যে আমাকে কে যেন জড়িয়ে ধরল। কিন্তু তাকে আমি কোন চোখে দেখিনি। এবং সারা শরীরে আঁচড় দিয়ে গেল। তারপর থেকে আমি ঠিক ভালো নেই। আমি সমগ্র বিষয়টি গ্রামের মানুষজনদেরকে জানিয়েছি। ” এই ঘটনা শুধু অর্জুনজোড়া গ্রাম নয়। লাগোয়া জজডি, কুদলং, বাঘাটাড়, রামডিতেও ভূতের আতংক চেপে বসেছে। দিনের পর দিন পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে বাজার-হাট যেতে ভয় পাচ্ছেন গ্রামের মানুষজন। জঙ্গলে শুকনো পাতা সংগ্রহ করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন। তারাও ভয়ে জঙ্গলে যেতে পারছেন না।

    ওই এলাকায় কাজ করা একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের বিজনেস করসপন্ডেন্ট বাণীব্রত রক্ষিত বলেন, “এলাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে । ভূতের আতঙ্কে স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়েছে। বুধবার গ্রামে গিয়ে বিজ্ঞান মঞ্চ বোঝান ভূত-পেত্নী এসব কিছু হয় না। দিনের পর দিন ওই এলাকায় অলৌকিক ঘটনার মুখোমুখির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তারা এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন যে ঘরে কান্নাকাটি করছেন। জলধর গড়াই নামে ওই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আতঙ্ক কাটাতে ঝালদায় গুরুবাবার কাছে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করিয়ে আসেন। তারপর আর তিনি কোন ভূত দেখেননি বলে দাবি। তবে আতঙ্কে ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।
  • Link to this news (প্রতিদিন)