• দিদিমণি আছেন, নেই একজনও পড়ুয়া! বসে বসে দিন কাটে দুই শিক্ষিকার
    এই সময় | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এক লপ্তে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে। এমনিতেই রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম। তার উপর একাধিক স্কুল থেকে ২-৩ জন করে শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি যাওয়ায়, সঙ্কটের মুখে সে স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থাই। প্রধান শিক্ষক তো বুঝতেই পারছেন না, কী ভাবে স্কুল চালাবেন। অথচ এ সবের মধ্যে উলটপুরাণ পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের বামনদা শ্রী শ্রীমা বালিকা বিদ্যালয়ে। এখানে দিদিমণি আছেন, তবে পড়াবেন কাদের, পড়ুয়াই তো নেই!

    স্টাফরুমে বসে নিজেদের মধ্যে গল্প করেন দুই দিদিমণি, মাঝে মধ্যে ফোন দেখেন। কী করবেনই বা তাঁরা? গত ৩ বছর ধরেই ছাত্রী শূন্য এই জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়। ২ জন শিক্ষিকা ও ২ জন শিক্ষাকর্মী ছিলেন। শিক্ষিকারা বাম আমলেই চাকরি পেয়েছেন। তবে, দুই শিক্ষাকর্মী ২০১৬-র এসএসসি প্যানেল থেকে নিয়োগ পান। বাকিদের মতো তাঁরাও চাকরি হারিয়েছেন। এই মুহূর্তে নীল-সাদা দ্বিতল ভবনের এক তলার স্টাফরুমে বসে বসেই দিন কাটছে দুই শিক্ষিকার।

    ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিদ্যালয়। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এই বালিকা বিদ্যালয় প্রথম প্রথম ভালোভাবেই চলছিল বলে জানান স্থানীয়রা। তবে, ২০১৫-১৬ সালের পর থেকে একে একে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকরা অবসর গ্রহণ বা বদলি হতে শুরু করেন। এরপরই কোভিডের থাবা। সেই ফাঁড়া কাটিয়ে স্কুল খুললে দেখা যায় ছাত্রীরা আর আসে না।

    স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা জানা এবং শিক্ষিকা প্রণালী মণ্ডল স্টাফরুমে বসেছিলেন বুধবার। মধুমিতা ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষিকা। ২০০৯ সালে এই স্কুলে যোগদান করেন। প্রণালী বাংলার শিক্ষিকা। ২০০৮ সালে অন্য স্কুল থেকে বদলি হয়ে আসেন।

    ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা জানা এই সময় অনলাইনকে বলেন, ‘২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে হাতে গোনা কয়েক জন ছাত্রী ছিল। তারা অষ্টম শ্রেণি পাশ করে যাওয়ার পরই ছাত্রীশূন্য হয়ে যায় স্কুল। গত তিন বছর ধরে অনেক চেষ্টার পরও ছাত্রী জোগাড় করতে পারিনি। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের নেতৃত্বে গ্রামবাসীদের নিয়ে বৈঠকও করেছি। বৈঠক যখন হয় গ্রামবাসীরা ছাত্রী ভর্তি করবেন বলে জানালেও, করেননি। কী আর করব? এ ভাবেই চলছে তিন বছর ধরে।’

    গত ৭-৮ বছর ধরে এই স্কুলে বিজ্ঞান পড়ানোর কেউ নেই। এটাও ছাত্রীশূন্যতার আরেকটা কারণ বলে মনে করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। তাঁরা বলছেন, সরকারি নির্দেশে যদি তাঁদের অন্যত্র বদলি করা হয়, তাতেও আপত্তি নেই। কিন্তু এই স্কুলটা এ ভাবে শেষ হয়ে যাবে, সেটাও মানতে পারছেন না দুই দিদিমণি। একজন বিজ্ঞানের শিক্ষক দিলেই এ স্কুলের ছবিতে কিছুটা হলেও বদল আসবে বলে আশাবাদী তাঁরা।

    যদিও জেলা শিক্ষা দপ্তর যে এ নিয়ে যে নতুন করে ভাবছে না, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক। জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বপন সামন্ত এই সময় অনলাইনকে বলেন, ‘ওই স্কুলের বিষয়ে পর্ষদকে জানিয়েছি। আমরা অন্য স্কুলের সঙ্গে মার্জ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।’ ফলে শিক্ষিকার অভাবে রাজ্যের স্কুলে স্কুলে যখন, প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকার কপালে চিন্তার ভাঁজ, তখন একেবারে অন্য ছবি মেদিনীপুরের এই স্কুলে।

  • Link to this news (এই সময়)