• ওয়াকফ আইনের সংশোধনীতে স্থগিতাদেশ হল না, তবে তিনটি অন্তর্বর্তী নির্দেশিকা জারির কথা ভাবছেন প্রধান বিচারপতি খন্না
    আনন্দবাজার | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • আবেদনকারীদের আর্জি মেনে সমগ্র সংশোধিত ওয়াকফ আইন (২০২৫)-এ বুধবার স্থগিতাদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তবে নতুন এই আইনের তিনটি বিষয় বিবেচনা করে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিতে চেয়েছিল প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরোধে শেষ মুহূর্তে সেই অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীর সওয়াল, ওয়াকফ আইনের যে তিন বিষয় সুপ্রিম কোর্ট উত্থাপন করেছে, তা নিয়ে তাঁদের আরও বক্তব্য জানাতে দেওয়া হোক। তার পরেই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিক শীর্ষ আদালত। সেই অনুরোধ মেনে বৃহস্পতিবার মামলাটি শুনবে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। ওই ডিভিশন বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথন।

    সংসদের দুই কক্ষেই ভোটাভুটিতে জেতার পর সংশোধিত ওয়াকফ আইন দেশে কার্যকর করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে বহু পিটিশন দায়ের হয়। বুধবার প্রায় ৭০টি আবেদন একত্রিত করে শুনেছে শীর্ষ আদালত। আবেদনকারীরা ওই আইনে স্থগিতাদেশ জারি করার আর্জি জানিয়েছিলেন। যদিও সুপ্রিম কোর্ট প্রথম দিনের শুনানিতে তা মানতে চায়নি। তবে আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার ডিভিশন বেঞ্চ। সেই আলোচনার ভিত্তিতেই তিনটি অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়ার কথা বিবেচনা করে শীর্ষ আদালত। সেই তিন অন্তর্বর্তী নির্দেশ কী?

    এক, সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ আইনকে চ্যালেঞ্জ করে যে মামলা চলছে, তা চলাকালীন যে সম্পত্তিকে আদালত ওয়াকফ বলে ঘোষণা করেছে, তাকে ‘ওয়াকফ নয়’ বলে ধরা যাবে না।

    দুই, মামলা চলাকালীন, কোনও ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে জেলাশাসক প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চালাতে পারবেন। কিন্তু সেই বিধান কার্যকর করা যাবে না।

    তিন, ওয়াকফ বোর্ড এবং ওয়াকফ কাউন্সিলের সদস্যদের মুসলিম হতেই হবে। শুধু যাঁরা পদাধিকার বলে ওয়াকফে যোগ দেবেন, তাঁরা ভিন্ন ধর্মের হতে পারেন।

    এই তিন অন্তর্বর্তী নির্দেশ নিয়ে আলোচনার সময়ে প্রধান বিচারপতি খন্না বলেন, ‘‘এমনিতে আমরা এই ধরনের অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিই না। কিন্তু এটা ব্যতিক্রম।’’ তিনি এ-ও জানান, এই শুনানি ছয় থেকে আট মাসও চলতে পারে। তখনই কেন্দ্রীয় সরকার এবং কয়েকটি রাজ্য এখনই এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি না-করতে আর্জি জানায়। তারা আরও সময় চেয়ে নেয়। তাতে সায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

    আবেদনকারীদের আইনজীবীরা বুধবার সুপ্রিম কোর্টের উত্থাপন করা এই তিনটি বিষয় নিয়েই সওয়াল করেন। আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ‘‘এত দিন শুধু মুসলিমরাই ওয়াকফ বোর্ডে থাকতে পারতেন। এখন হিন্দুরাও পারবেন। এটা নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের উপর দখলদারির শামিল।’’ শুনে প্রধান বিচারপতি জানান, নতুন আইনে বলা হয়েছে, দু’জন মাত্র অমুসলিম সদস্য থাকবেন। সিব্বল পাল্টা সওয়াল করেন, নতুন আইনে বলা হয়েছে ‘অন্তত’ দু’জন অমুসলিম সদস্য থাকবেন। অর্থাৎ দু’জনের বেশিও থাকতে পারেন। সেই নিয়ে সরকারি আইনজীবী তুষার মেহতার পাল্টা সওয়ালের পরে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে প্রশ্ন করে, হিন্দুদের সম্পত্তি সংক্রান্ত বোর্ডে কি কোনও মুসলিমকে সদস্য হতে দেবে সরকার?

    নয়া সংশোধিত ওয়াকফ আইনে জেলাশাসককে বেশ কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন জেলাশাসক বা তাঁর সম পদমর্যাদার কোনও আধিকারিক। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিব্বলের সওয়াল, জেলাশাসক সরকারের অঙ্গ। তিনি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা অসাংবিধানিক। এই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সরকারি আইনজীবী তুষারের উদ্দেশে বলেন, ‘‘জেলাশাসক যদি সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন যে, কোনটা ওয়াকফ, কোনটা নয়, তা কি ঠিক হবে?’’

    ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সিব্বল। এই ধারায় দীর্ঘ দিন ধরে কোনও সম্পত্তি ধর্মীয় বা সেবার স্বার্থে ব্যবহার করা হলে তা ওয়াকফ বলে ধরে নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে নথিভুক্তকরণ না হলেও চলে। সিব্বলের দাবি, এই ধারা ইসলাম ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাল্টা সওয়াল করেন সরকারি আইনজীবী তুষার। তাঁকে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘আপনি বলছেন ওয়াকফ বাই ইউজার কোর্টের রায়ে হলেও আজ তা বাতিল?’’ তাঁর পর্যবেক্ষণ, বেশির ভাগ মসজিদ চতুর্দশ, পঞ্চদশ শতকে তৈরি। তাদের নথি দাখিল কী করে সম্ভব? তার পরেই তিনটি অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। যদিও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরোধে তা জারি করা হয়নি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)