• ‘কিলবিল’ করে হলমুখী দর্শক, ১৩ বছরে কতটা বদলেছে ‘সোসাইটি’? আড্ডায় সৃজিত, পরমব্রত
    এই সময় | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময় অনলাইন: ছবি তো রমরমিয়ে চলছে, তবে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের এই ‘কিলবিল’ নাম নিয়ে কিন্তু অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন।

    সৃজিত: ‘কিলবিল সোসাইটি’ তো আসলে সোসাইটি অফ কন্ট্রাক্ট কিলারস। যেখানে মেরে ফেলা হয় এবং বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে ‘কিলবিল’। এখন তো সবাই অ্যাঞ্জেলিনা জোলির জীবনের ঘটনাটা জানেন। তাঁর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত গল্প। সেখানেও কন্ট্রাক্ট কিলার ব্যাপারটা ছিল।

    এই সময় অনলাইন: নামটা শুনে পরমব্রতর প্রথম প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

    পরমব্রত: সত্যি বলতে খুন করে বিল ধরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা প্রথমে মাথায় আসেনি। বাংলা ভাষায় যে ভাবে শব্দটা আমরা ব্যবহার করে থাকি, সেই ভাবেই এসেছে কিলবিল করে ওঠা। তবে বিখ্যাত হলিউড সিনেমা আছে আমাদের সকলেরই খুব প্রিয়। ‘কিলবিল ভলিউম ওয়ান’, ‘কিলবিল ভলিউম টু’ সেগুলো মাথায় এসেছে। তার পর তো চিত্রনাট্য পড়ে বুঝতে পেরেছি, যে এটার একটা আলাদা দিক রয়েছে।

    এই সময় অনলাইন: এখন কি সারাক্ষণ টিকিট বিক্রির অ্যাপের দিকেই চোখ থাকছে?

    পরমব্রত: একবার নয়। ওটা সর্বক্ষণ মোবাইলে খোলাই থাকে। সকলের ক্ষেত্রেই এই অনুভূতিটা সমান। যে অস্বীকার করবে, সে মিথ্যে কথা বলছে। আগে তো লাইভ দেখার এমন উপায় ছিল না। তবে যখন থেকে এই সুবিধা হয়েছে, তখন থেকে মোটামুটি পরিচালক, প্রযোজকরা সকাল থেকে লাইভ খেলা দেখার মতো দেখতে থাকেন। পাঁচ মিনিট সময়টাকেও মনে হয় অনেকটা। পাঁচ মিনিট যে আসলে বিশ্বের সময়ের মাপকাঠিতে কিছুই নয়, সেটা মাথায় থাকে না। খালি মনে হয় কখন সিটগুলো লাল হবে।

    সৃজিত: পৃথিবীতে বাবা, মায়েরা তো আলাদা করে স্থান, কাল, পাত্র হয় না। পরিচালকের ক্ষেত্রেও সব সময়ই এরকম একটা মাতৃস্থানীয় বা পিতৃস্থানীয় চিন্তাভাবনা থাকে। তাই মানুষ কতটা দেখছেন সেদিকেও যেমন নজর থাকে, তেমনই প্রতিটা সমালোচনায়ও চোখ রাখতে হয়।

    এই সময় অনলাইন: ‘হেমলক’ টু ‘কিলবিল’ বিগত তেরো বছরে একে অন্যের মধ্যে কতটা পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন?

    সৃজিত: পরমের ক্ষেত্রে বলতে পারি ও এখন অনেক ধীর, স্থির। একসঙ্গে অনেক কিছু ম্যানেজ করতে পারে। এবং খুব ভালোভাবেই সেটা করে। আসলে সত্যি বলতে আমাদের জীবনে ক্রাইসিসের সংখ্যা তো বেড়েছে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে সবটা অ্যাডজাস্ট করতে হয়, মানিয়ে নিতে হয় সেটাও শিখে গিয়েছে।

    পরমব্রত: আমরা কেউই খুব একটা মৌলিক ভাবে বদলাই না। আমি সৃজিতের ক্ষেত্রে পরিবর্তনটা আপাতদৃষ্টিতেই বলব। কারণ, ভিতরের মানুষটাকে এত অল্পে বোঝা সম্ভব নয়। আমি ২০১২-১৩ সালে যে প্যাশনেট, রোম্যান্টিক মানুষটিকে দেখেছিলাম, আজ সেখান থেকে দেখে মনে হয় অনেকটাই বদলেছেন। তবে আমি যদি ঘটনার নিরিখে বলি, তা হলে গত তেরো বছরে আমার জীবনটা একটু হলেও সৃজিতের থেকে ঘটনাবহুল। অনেক কিছু ঘটেছে। যে কারণে আমার ভিতরের বিবর্তনটা দেখতে পাওয়াও অনেকটা সোজা। তবে এটা ঠিক, সৃজিত আগে বাহ্যিক ভাবে অনেক রোগা ছিল, এখন একটু মোটা হয়েছে। এটা খালি চোখে ধরা পড়ে।

    এই সময় অনলাইন: পরিচালকের রাগ কি আগের থেকে বেড়েছে?

    পরমব্রত: রাগ ওর চিরকালই ছিল। তবে বহিঃপ্রকাশটা বেড়েছে। সেটা ঠিক রাগ নয়, একটা বয়সজনিত বিরক্তি।

    সৃজিত: (হেসে) বলতে চাইছে আমি একটু খিটখিটে বুড়ো হয়ে গিয়েছি।

    এই সময় অনলাইন: গভীর অবসাদ গ্রাস করেছে কখনও?

    সৃজিত: হ্যাঁ ছোটবেলা থেকেই নানা কারণে অবসাদ এসেছে। সেগুলো প্রশমিত করার বিভিন্ন উপায় নিজেদের মতো করেই বের করেছি। তবে হ্যাঁ, এটাও ঠিক ইন্ডাস্ট্রির অংশ হওয়ায় আমাদের জীবনটা অনেক বেশি ঘটনাবহুল হয়ে গিয়েছে। আমাদের চারপাশের প্রত্যেকটা মানুষও এখন আমাদের জীবনের ক্রাইসিসগুলো জানে।

    এই সময় অনলাইন: চারপাশে কিলবিল করা মানুষগুলো, বিশেষত ট্রোলিং কতটা প্রভাবিত করে?

    সৃজিত: সোশ্যাল মিডিয়ায় আসলে আমি নিজেই নিজের সিকিউরিটি গার্ড। সেখানে যদি কেউ ট্রোল করে বা অপমান করে আমি তাকে ব্লক করে দিই। আর যদি তার সমালোচনা আমার ভালো লাগে, তা হলে সেটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করি। আর যদি খুব মজার লাগে তা হলে সেটা শেয়ার করি। বাকি খুব একটা অসুবিধা হয় না।

    পরমব্রত: সোশ্যাল মিডিয়ার কমেন্ট আমি পড়ি না। বন্ধ করে দিয়েছি বহু বছর হয়ে গেল। ফলে আমাকে এই বিষয়টা খুব একটা ভাবায় না। কেউ যদি বলে সবাই খুব ভালো বলছে, তখন টুক করে একটুখানি দেখে নিই। আসলে আমি একটা গণ্ডি তৈরি করেছি, তিন থেকে চারজন রয়েছে সেখানে। তার বাইরে কারও থেকে কোনও প্রত্যাশাই করি না। প্রত্যেকে কাল সকালে উঠে পাল্টি খেতে পারে।

    এই সময় অনলাইন: ‘লোকে কী বলবে’ তবে আজ আর ভাবায় না?

    পরমব্রত: আসলে সত্যি বলতে লোকে বলবেই।

    সৃজিত: হ্যাঁ একদমই। শুধু বলবেই না যে ভাবে বলবে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই মেনে নেওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

    এই সময় অনলাইন: এমন সুদর্শন অভিনেতার চেহারায় হঠাৎ এমন পরিবর্তন...

    পরমব্রত: (থামিয়ে দিয়ে) আরে দাঁড়ান, আমি একেবারেই সুদর্শন নই। প্রথমত আমার হাত-পা গুলো শরীরের তুলনায় লম্বা। হালকা একটা শ্যাওড়া গাছের ভূতের ফিল আছে। মোটের উপর প্রেজ়েন্টেবল বলতে পারেন। আমি তো মনে করি আমার সমসাময়িক যাঁরা যেমন যিশু, আবীর অনেক সুন্দর দেখতে।

    সৃজিত: (মজা করে) যে কারণে পরমের ভৌতিক ছবি বেশি পছন্দ। তবে আমি বলব যিশু, আবীর অবশ্যই সুন্দর। পরম হয়তো ঠিক সেই ঘরানার গ্রিক গড নয়, তবে তাতেও ওর মহিলা ভক্ত সংখ্যা কিন্তু প্রচুর। আর পরম কতটা সুদর্শন তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও অসাধারণ অভিনেতা। ওর মধ্যে পরিচালনার গুণ থাকার কারণে কাজ করতেও সুবিধা হয়। পরিচালকের সিটে বসে আমি হয়তো অনেক কিছু না বললেও, ও যে ভাবে ছোট ছোট বিষয়গুলো পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছে, সেটা প্রশংসাযোগ্য।

    এই সময় অনলাইন: কৌশানী তো অসাধারণ, এটা কি এখনও পর্যন্ত ওঁর সেরা বলা যায়?

    সৃজিত: প্রথমে চরিত্রটা একদম অন্যরকম ছিল। সত্যি বলতে তখন অন্য একজনকে ভেবেছিলাম। পরে নতুন মুখ খুঁজতে শুরু করি। এবং সেই সময় ‘আবার প্রলয়’ এবং ‘বহুরূপী’ নিয়ে চর্চা শুরু হয়। এবং আমাদের মনে হয়েছিল কৌশানীকে এই চরিত্রের জন্য ভাবা যেতে পারে। এ ছাড়া একটা নতুন জুটিও তৈরি হবে ইন্ডাস্ট্রিতে। পরম-কৌশানী। সেটাই তো ক্লিক করে গেল। তবে আরেকটা জিনিস আমরা ভেবেছিলাম যে কৌশানীকে দিয়ে কাজ করাতে গেলে হয়তো কিছু ওয়ার্কশপ করতে হবে বা কিছু আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তেমন কোনও কিছুর প্রয়োজন হয়নি। ও অসম্ভব ভালো কাজ করেছে।

    এই সময় অনলাইন: পরমের কেমন লাগল কৌশানীর সঙ্গে জুটি বেঁধে?

    পরমব্রত: খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। ওর বিকাশটা কোথাও একটা আটকে ছিল। ‘আবার প্রলয়’ থেকে সেটা প্রকট হয়েছে। তখন সকলেই ভাবতে শুরু করেছেন যে এই মেয়েটির মধ্যেও ভালো অভিনয়ের ক্ষমতা রয়েছে। একে ঠিক জায়গায় ফেললে কিছু হতে পারে। আমি সহ-অভিনেতা হিসেবে অন্তত এটা দেখতে পেয়েছি। একজন অভিনেতার জীবনে সেই কারণেই ‘বহুরূপী’, ‘আবার প্রলয়’ বা ‘কিলবিল সোসাইটি’র মতো ছবি হওয়া দরকার। না হলে মানুষ জানতেই পারবে না তার অভিনয় ক্ষমতা।

    এই সময় অনলাইন: এই যে চাইলেই মৃত্যু হবে, জীবন কি সত্যিই এমন পরিকল্পনা মাফিক চলে?

    সৃজিত: না জীবন তো একেবারেই পরিকল্পনা মাফিক চলে না। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলতেই হয়, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে যে কনট্রাক্ট কিলারকে তিনি ভাড়া করেছিলেন, পরবর্তীকালে আরও একটি সিদ্ধান্ত নেন। কন্ট্রাক্ট কিলারের জন্যই কিন্তু বলতে গেলে আমরা অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে পেয়েছি। কারণ, তিনি যদি সেই দিন তাঁর অ্যাসাইনমেন্টটা করতেন, তা হলে কিন্তু আমরা অভিনেত্রীকে পেতাম না। এবং তাঁর জীবনের গল্পটাও অজানা থেকে যেত। তাই জীবন নানা বাঁকে, নানা গতিতে এগোয়। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তে পরিবর্তনও হয়। সেটাই তো শাশ্বত সত্য।

    পরমব্রত: হ্যাঁ, জীবনে তো সত্যিই পরিকল্পনা করে সব কিছু হয় না। তবে এই ছবির গল্প তো এখন অনেকেরই জানা। একজন মানুষ সমস্ত পরিকল্পনা করে এগিয়েছিলেন। খুব সচেতন ভাবে সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন যে তিনি আর পৃথিবীতে থাকতে চান না। এবং তিনি নিজে সেটা করতে পারছেন না বলেই অন্য একজনের সাহায্য নিয়েছেন। তাই সবটাই পূর্বপরিকল্পিত। আমরা শুধু সময়ের গতিতে ছুটে চলি।
  • Link to this news (এই সময়)