• ফেলো কড়ি মাখো তেল! বাড়ি পেতে নাভিশ্বাস, বাড়ছে দালালদের দৌরাত্ম্য
    বর্তমান | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: ফেলো কড়ি মাখো তেল! শিলিগুড়ি শহরে বাড়ি ভাড়ার দর লাগামহীন। বাথরুম ও কিচেন সহ সিঙ্গেল বেডরুমের ভাড়া পাঁচ হাজার টাকার উপরে। বহুতলে দুই কিংবা তিনটি রুম বিশিষ্ট ফ্ল্যাটের ভাড়া তো আকাশ ছোঁয়া। কয়েক বছরের মধ্যে এমনটা হয়েছে। এর নেপথ্যে দালাল চক্র। এদের কমিশন প্রথম মাসের রুমভাড়ার অর্ধেক টাকাই! এদের মাধ্যমে অসাধু কারবারি রুম কব্জা করছে বলে অভিযোগ। এতে পুরসভা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। 

    শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার অবশ্য বলেন, বিষয়টি শুনেছি। কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব তা নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। তবে বিপদ এড়াতে ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিক উভয়েরই উচিত সচিত্র পরিচয়পত্র সহ ভাড়াটিয়ার বিস্তারিত তথ্য পুলিস-প্রশাসনের কাছে দাখিল করা। নাগরিকদের সচেতন করতে মাইকিং করা হচ্ছে। 

    শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের এক অফিসার জানান, প্রতিটি থানায় ভাড়াটিয়াদের তথ্য মজুত রাখার সেল আছে। এজন্য টেনেন্ট ভেরিফিকেশন ফর্ম রয়েছে। পাড়া বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে নাগরিকদের অবহিত করা হচ্ছে। 

    উত্তরবঙ্গ তো বটেই রাজ্যের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর শিলিগুড়ি। এনজেপি, দেশবন্ধুপাড়া, কলেজপাড়া, সুভাষপল্লি, সূর্যনগর, হাকিমপাড়া, আশ্রমপাড়া, হায়দরপাড়া, প্রধাননগর, মাল্লাগুড়ি, চম্পাসরি প্রভৃতি এলাকায় প্রচুর বহুতল হয়েছে। সেগুলিতে রুম ভাড়ায় অস্বাভাবিক। এর জেরে কর্মসূত্রে প্রতিবেশী জেলা ও রাজ্য থেকে এখানে আসা বাসিন্দারা চরম বেকায়দায় পড়ছেন। 

    ভাড়াটিয়াদের একাংশের বক্তব্য, কলেজপাড়ার মতো শহরের অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া নাগালের বাইরে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাড়ি ভাড়াই শুরু হয় ১০ হাজার টাকা থেকে। এর বাইরে দশরথপল্লি, মহাকালপল্লি, সুপারিবাগান, হাকিমপাড়া ও হায়দরপাড়ার গলিতে, চম্পাসরিতে সিঙ্গেল বেডের রুমের ভাড়াই প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। দুই বা তিনটি রুম, হলঘর, কিচেন ও বাথরুম থাকলে ভাড়া ন’হাজার থেকে শুরু। অর্থাৎ ফেলো কড়ি মাখো তেল— এই পন্থায় বাড়িভাড়ার ব্যবসা চলছে। তাঁদের অভিযোগ, দালালদের দৌরাত্ম্যের জেরেই ফ্ল্যাটগুলির ভাড়া এতটা বেড়েছে। যা সাধারণের নাগালের বাইরে। এ ব্যাপারে পুরসভা ও প্রশাসন সবজেনেও নির্বিকার। কারণ দালাদের একাংশ রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায়। 

    প্রসঙ্গত, একদা জমি ও বাড়ি বিক্রি নিয়ে দালালচক্র সক্রিয় ছিল। এখন বাড়িভাড়া জোগাড় করে দিতে সক্রিয় দালাল চক্র। প্রতিটি রাস্তার ধারে ইলেক্ট্রিক পোলে, গাছ কিংবা চা-পানের দোকানের সামনে ‘টুলেট সার্ভিস’ লেখা পোস্টার সাঁটা থাকছে। তাতে থাকছে ফোন নম্বর। এমনকী, দালালরা সোশ্যাল মিডিয়াতেও সক্রিয়। 

    কয়েকজন দালাল বলেন, একদিনে একাধিক বাড়ি দেখালে ২০০ টাকা সার্ভিস চার্জ নেওয়া হয়। আর বাড়ি ঠিক করে দেওয়ার পর প্রথম মাসের ভাড়ার অর্ধেক টাকা ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে নেওয়া হয়। বাড়ির মালিকরা বলেন, আগের মতো কাঠের বা টিনের চালের বাড়ি নেই। এখন বাড়ি অনেকটাই সাজানো। সেই নিরিখেই ভাড়ার দর ঠিক করা হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)