• নেশামুক্তি কেন্দ্রে যুবককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ, হাসপাতালে দেহ ফেলে পালালেন কর্মীরা
    বর্তমান | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, পতিরাম: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন একটিও অনুমতি দেয়নি। অথচ অগুণতি নেশামুক্তি কেন্দ্র চলছে রমরমিয়ে। মাঝেমধ্যে অত্যাচারের শিকার হচ্ছে নেশাগ্রস্তরা। এবার এক যুবককে পিটিয়ে মেরে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ফেলে রেখে পালানোর অভিযোগ উঠল কেন্দ্রের কর্মীদের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে শোরগোল পড়েছে। বুধবার এই ঘটনার দীর্ঘক্ষণ পর পরিবারের সদস্যরা এসে মৃত যুবককে শনাক্ত করেন। পরিবারের অভিযোগ, নেশামুক্তি কেন্দ্রে নেশা ছাড়ানোর নামে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। মৃত যুবকের মাথায়, গলায়, হাতে, ঠোঁটে রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে। যা দেখে পরিবারের অনুমান, দড়ি দিয়ে বেঁধে খুন করা হয়েছে তাঁকে। ময়নাতদন্তের পর সন্ধ্যায় পরিবারের হাতে যুবকরে দেহ তুলে দেওয়া হয়। শেষকৃত্যের পর এনিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবে বলে জানিয়েছে পরিবার। 

    পুলিস সূত্রে খবর, মৃত যুবকের নাম অভিষেক ঘোষ (৩৬)। বাড়ি পতিরামের বাজার এলাকায়। নেশা ছাড়ানোর জন্য ওই যুবককে গত ৭ তারিখ পতিরামের চখাইয়ে একটি কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, সকালে হঠাৎ ফোন করে বলা হয়, অভিষেক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিছুক্ষণ পর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর দেওয়া হয়। 

    মৃতের মামা সুকমল সরকার বলেন, আমার ভাগ্নেকে ৭ তারিখ ভর্তি করা হয়েছিল। আজ ফোন করে প্রথমে অসুস্থ এবং পরে মৃত্যুর কথা বলা হয় কেন্দ্র থেকে। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন করলেও তাঁরা কেউ ধরেননি। ভাগ্নের শরীরের অনেক জায়গায় ক্ষত রয়েছে। তাকে খুন করা হয়েছে। আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করব। 

    অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিক প্রদীপ কুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, এই কেন্দ্রটি অন্যরা চালায়। আমি এবিষয়ে কিছুই জানি না। বাড়িতে ছিলাম না। তবে যুবককে খুন করা হয়নি। 

    পতিরাম থানার পুলিস প্রাথমিক অভিযোগ পেয়ে ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। ডিএসপি (সদর) বিক্রম প্রসাদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। 

    হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার সকাল ১০ টার পর দু’জন মৃতদেহটি এনেছিলেন। ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করানোর পর নাম জিজ্ঞেস করলে বলতে পারেননি তাঁরা। এমনকী ভুল সই করার পর আধার কার্ড আনার নাম করে দ্রুত হাসপাতাল ছাড়েন তাঁরা। চিকিৎসকদের বলা হয়, বাড়িতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন যুবক। চিকিৎসকদের সন্দেহ হতেই খবর দেওয়া হয় সুপার এবং পুলিসকে। ঘণ্টাতিনেক হাসপাতালে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই পড়েছিল দেহ। পরে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে আসেন।

    সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগ বলেন, হাসপাতালে দু’জন ওই মৃতদেহটি এনেছিলেন। অনেক পরে আসল বিষয়টি জানা যায়। 

    বছর দুয়েক আগে বালুরঘাটের পরানপুরে একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে এক যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ হয়েছিল। সেই সময়ও ওই কেন্দ্রের কর্মীরা হাসপাতালে দেহ ফেলে পালিয়েছিলেন। গঙ্গারামপুরেও নেশামুক্তি কেন্দ্রে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ছিল। তারপর বালুরঘাটে অভিযান চালিয়ে অনেক অবৈধ নেশামুক্তি কেন্দ্র সিল করা হয়েছিল। কিন্তু বারবার একই ঘটনা ঘটায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ উঠছে।
  • Link to this news (বর্তমান)