জেলা নেতাদের মধ্যে চরম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরা দিশেহারা
বর্তমান | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
পিনাকী ধোলে, পুরুলিয়া: টানা দু’বার পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির কাছে হারতে হয়েছে তৃণমূলকে। গত বিধানসভা নির্বাচনেও পুরুলিয়া জেলার অধিকাংশ আসনেই হেরেছে তৃণমূল। দলের এই হারের অন্যতম কারণ হিসেবে জেলার নেতাদের কোন্দলকেই দায়ী করছেন ব্লক সভাপতিরা। তাঁদের দাবি, জেলা নেতাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণেই লক্ষ্যহীন নিচুতলার কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে জেলাজুড়ে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, গত সোমবার পুরুলিয়ার সমস্ত ব্লক সভাপতিদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া, মহিলা সভানেত্রী সুমিতা সিং মল্ল, দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিভিন্ন শাখা সংগঠনের জেলা সভাপতিরা। বৈঠকে ছিলেন তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা আই প্যাকের কর্মীরাও। ব্লকগুলিতে সংগঠনের হাল নিয়ে জানতে চাওয়া হয় ব্লক সভাপতিদের থেকে। বৈঠক সূত্রে খবর, কয়েকজন ব্লক সভাপতি একেবারে অকপট জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন। তাঁদের বলতে শোনা যায়, জেলার নেতাদের মধ্যে চূড়ান্ত গ্রুপবাজি চলছে। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধাচারণ করছেন। একজন সভার আয়োজন করলে সেই সভায় যাতে লোক না হয় সেই চেষ্টা করছেন অন্যজন। এর প্রভাব পড়ছে ব্লকের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। যার ফলে নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হচ্ছে।
পুরুলিয়ায় তৃণমূলের জেলা নেতাদের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দল দীর্ঘদিনের। একসময় দলে শান্তিরাম মাহাত ও সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যে কোন্দল ছিল বলে শোনা যায়। সৌমেন বেলথরিয়া জেলা সভাপতি হওয়ার পর গোষ্ঠীকোন্দল আরও প্রকট হয়। পরবর্তীতে গোষ্ঠীকোন্দলের সমীকরণও বদলায়। সৌমেনকে সরাতে সমস্ত শক্তি এক হয়। আজ থেকে মাস ছয়েক আগেই সৌমেনের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ চিঠি দেন জেলার নেতারা। চিঠিতে সই করেছিলেন জেলার দুই বিধায়ক, প্রাক্তন দুই জেলা সভাপতি, জেলা পরিষদের শীর্ষস্থানীয় দু’জন জনপ্রতিনিধি ও কিছু শাখা সংগঠনের জেলা সভাপতিরা। সেই সময়ে সৌমেন বদল হচ্ছে বলেও রব ওঠে জেলায়। যদিও সৌমেনের উপরেই এখনও ভরসা রেখেছে দল।
ব্লক সভাপতিদের অনেকের মত, পুরুলিয়ার জেলাস্তরের নেতারাই ঠিক নেই। মঞ্চে সবাই একসঙ্গে হাসিমুখে, অথচ মঞ্চ থেকে নেমেই একে অপরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেইসব নেতারাই আবার নিজেদের বুথে জিততে পারেন না! জেলা ঠিক হলে তবেই ব্লক ঠিক হবে বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কয়েকজন ব্লক সভাপতি। জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া মানছেন, ব্লক সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ বৈঠকের ব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ তিনি। তবে, সাংগঠনিকভাবে দলকে মজবুত করতে সমস্ত ব্লকে ব্লকে বৈঠক হবে। বুথ লেভেল থেকে কাজ শুরু হবে শীঘ্রই।
শুধু জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে নয়, জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কয়েকজন ব্লক সভাপতি। তাঁদের ক্ষোভ, অনেক জনপ্রতিনিধি আছেন, যাঁরা দলের কোনও কাজকর্মই করেন না। ব্লক সভাপতিদের সঙ্গে সমন্বয় রাখেন না। জেলা পরিষদের এক শীর্ষস্থানীয় জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এক ব্লক সভাপতির আবার ক্ষোভ— ওই জনপ্রতিনিধি সারাক্ষণ হুটার বাজিয়ে ঘুরে বেড়ান। আর বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের উদ্বোধনে গিয়ে ফিতে কাটেন। কিন্তু ওই জনপ্রতিনিধির কোনও জনসংযোগই নেই। তাই নিজের বুথেও হারতে হয় তাঁকে।