জাল ঘি যাচ্ছে কলকাতার বড়বাজারেও, কিনছে একাধিক নামী কোম্পানি
বর্তমান | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: অবৈধ, তবু ভেজালের ব্যবসা যেন আজকাল একরকমের শিল্প! এই শিল্পে ‘সৃষ্ট’ ভেজাল ঘি নদীয়ার ফুলিয়া-চাকদহ ছাড়িয়ে পৌঁছে যাচ্ছে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতার বড়বাজারে। লোকাল ভেন্ডার তো বটেই, অনেকক্ষেত্রে একাধিক নামী কোম্পানিও ভেজালের ক্রেতা! তাই মাঝেমধ্যে পুলিসি অভিযান চললেও অধিক মুনাফার লোভে ব্যবসা ছাড়তে পারে না ভেজাল তৈরিতে যুক্ত ব্যবসায়ীরা।
ফুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে দেখা গিয়েছে, ভেজাল ঘি তৈরির শতাধিক ঠিকানা রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য এলাকাগুলি হল বুইচা ঘোষপাড়া, সাহেবডাঙা, বেলেমাঠ, বাগানপাড়া, বয়ড়া। এই এলাকাগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় ঘি তৈরির কারখানা রয়েছে। যার মধ্যে একাধিক জায়গায় তৈরি হয় ভেজাল ঘি। ডালডা, পামতেল, ক্ষতিকর ক্রিম এবং একাধিক রাসায়নিকের মিশ্রণে রীতিমতো সেই ভেজাল ঘিয়ের ‘মার্কেটিং’ হয় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। কোথায় কোথায় ছড়িয়ে যায় এই ভেজাল? পুলিসের একটি সূত্র বলছে, নদীয়া জেলার বিভিন্ন মার্কেটে যায় ভেজাল ঘি। লোকাল ভেন্ডারের মারফত বিক্রি হয়ে তা ভোজ্য ঘি হয়ে পৌঁছে যায় সাধারণ মানুষের ঘরে। তবে শুধু নদীয়াতেই নয়, নির্দিষ্ট ডিস্ট্রিবিউটর মারফত ভেজাল ঘি সাপ্লাই হয় মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা পর্যন্ত। বড়বাজারের পাইকারি বাজারেও প্রচুর পরিমাণে টিনভর্তি ভেজাল ঘি পৌঁছয় বলে একাধিক তদন্তে তথ্য পেয়েছে পুলিস ও ইবি। তবে পুলিসের একটি সূত্রের খবর এবং ভেজাল ঘি ব্যবসার অন্যতম চাঞ্চল্যকর তথ্য, অনেকসময় ভেজাল ঘিয়ের ক্রেতা নাকি একাধিক নামী কোম্পানিও। যাদের ব্র্যান্ডেড টিন অথবা কৌটোর আড়ালে ভেজাল ঘি পৌঁছে যায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মার্কেটে। আর তাই প্রস্তুতকারকদের কাছে ভেজাল মানেই অধিক মুনাফা। অনেকক্ষেত্রে আবার নামী ব্র্যান্ডের টিন ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে ভেজাল ঘি প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু সব জেনেশুনেও কেন এসব বন্ধ হয় না? দেখা গিয়েছে, ফুলিয়ার মতো একটি সাধারণ জায়গায় তৈরি ভেজাল ঘি কোনও নামী কোম্পানির কাছে পৌঁছলেও, তার অকাট্য প্রমাণ মেলে না। এছাড়াও, ভেজাল ঘিয়ের ‘ধান্দা’ চলার পিছনে অন্যতম কারণ রাজনীতি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মদত। বিভিন্ন মহলে মোটা টাকার ‘প্রণামী’ ফেললে অনায়াসেই চালিয়ে যাওয়া যায় বেআইনি ব্যবসা। ফলে, ভেজাল জেনেও একশ্রেণির মানুষ স্রেফ মুনাফার লোভে দিনের পর দিন জনসাধারণের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে মারাত্মক ক্ষতিকর ভেজাল ঘি। যদিও ভেজাল ঘি ধরতে নিয়মিত অভিযান চলে, এমনই দাবি নদীয়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাসের। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। ভেজাল ঘি পেলে আর্থিক জরিমানা করা হয়। তবে অনেকে প্রদীপ জ্বালানোর জন্য ঘি বানান। সেক্ষেত্রে গুণমানের তারতম্য হয়।
যদিও প্রশ্ন ওঠে, প্রশাসনের তরফে করা জরিমানা তো সামান্যই। সেই জরিমানা দিয়ে পুনরায় লক্ষ-কোটির মুনাফা করা কারবারিরা কি আদৌ কোনওদিন থামবে? (শেষ)