• তোপ দেগে দুর্গ উড়িয়ে দেয় ব্রিটিশ সেনারা, আজও মল্ল রাজাদের বিপুল রত্নভাণ্ডারের হদিশ মেলেনি
    বর্তমান | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • প্রদীপ্ত দত্ত, ঝাড়গ্ৰাম: মল্ল রাজাদের রাজপ্রাসাদ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা ঝাড়গ্রাম শহরে ছুটে আসেন। তবে মূল প্রাসাদ বা দুর্গের কোনও চিহ্ন আর নেই। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সৈন্যরা আসল দুর্গ কামান দেগে ধ্বংস করে দিয়েছিল। রাজ পরিবারের সদস্যরা সুড়ঙ্গ পথে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। দুর্গের ভিতরে ছিল বিপুল রত্ন ভাণ্ডার। তার সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি।

    রাজপ্রাসাদের সামনের খোলা জায়গায় অভিষেক স্তম্ভ রয়েছে। এখানেই ছিল মল্ল রাজাদের প্রধান দুর্গ। মানসিংহের অনুগত সেনাপতি সর্বেশ্বর সিং মল্ল রাজাদের যুদ্ধে পরাজিত করে ঝাড়গ্রাম রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। তিনি ‘মল্লদেব’ উপাধি গ্ৰহণ করেন। রাজার অধীনে সামরিক ও অশ্বারোহী বাহিনী ছিল। রাজ্যের ৮জন সর্দার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দেখভাল করতেন। মল্ল রাজারা ষোড়শ শতকের পর প্রথম বিপদে পড়েন বর্গি হামলার সময়(১৭৪১-’৫১ সাল)। তৎকালীন ঝাড়গ্রামের রাজা, বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁ ও বিষ্ণুপুরের রাজার সঙ্গে যৌথভাবে হামলা প্রতিহত করেন। পরপর তিনটি যুদ্ধে জয়লাভের পর শক্তিশালী রাজা হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই সাফল্য অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পলাশীর যুদ্ধের সময় সিরাজের হয়ে ঝাড়গ্রাম রাজ্যের সৈন্যরা অংশ নেয়। এরপরই রাজ্যটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শত্রুতার মুখে পড়ে। কোম্পানির আগ্ৰাসন রুখতে, দ্বাদশ রাজা শ্যামসুন্দর মল্লদেব গোপনে তৎকালীন বাংলার নবাব ও ধলভূমগড়ের রাজার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৭৯১ সালে কর্নেল ফার্গুসনের নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ১০০জন ইউরোপীয় সৈন্য, ৩০০জন অশ্বারোহী ও ১৪০০জন দেশি সিপাই ঝাড়গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে। ঝাড়গ্রামের দুধকুণ্ডি এলাকায় কোম্পানির সৈন্যরা হেরে যায়। এরপর দ্বিতীয় যুদ্ধ হয় ১৭৯৩ সালে রাধানগর এলাকায়। এই যুদ্ধে ঝাড়গ্রাম-সেনা পরাজিত হয়। কোম্পানির সৈন্য ঝাড়গ্রাম রাজার দুর্গটি ঘিরে ফেলে। কামানের তোপ দেগে দুর্গ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। চলে ব্যাপক লুটপাট। রাজা শ্যামসুন্দর মল্লদেব আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। রাজ্যের বড় অংশের অধিকার ছেড়ে দিতে হয়। রাজ পরিবারের বর্তমান উত্তর পুরুষ বিক্রমাদিত্য মল্লদেব বলেন, যুদ্ধে পরাজয়ের পর আমাদের মূল রাজপ্রাসাদ বা দুর্গ ইস্ট কোম্পানির সৈন্যরা ধ্বংস করে দেয়। পরিবারের সদস্যরা সুড়ঙ্গপথে পালিয়ে প্রাণরক্ষা করেন। মেদিনীপুরের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসে তৎকালীন রাজা আত্মসমর্পণ করেন। চুক্তি অনুযায়ী রাজ্যের সেনাবাহিনী বিলোপ করা হয়। রাজ্যের দক্ষিণ অংশের বড় এলাকা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এমনকী, স্বাধীন রাজ্যের নিজস্ব পতাকা রাখার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়। দুর্গের ভিতর বিপুল রত্নভাণ্ডার ছিল। তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়া দুর্গের নীচে খনন করা হলে হয়তো অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। ব্রিটিশদের সরকারি গেজেটের তথ্যের উপর নির্ভর করে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির ইতিহাস লেখা হয়েছে। আমাদের কাছে যে যথার্থ ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে, তার ব্যবহার হয়নি।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)