• ভিড়ে ঠাসা যাত্রাপালার আসরে হাজির হাতির পাল! ছুটোছুটি
    বর্তমান | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • রাজদীপ গোস্বামী, মেদিনীপুর: সবে তখন মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন রাজকুমার। বিস্ফারিত চক্ষু তাঁর। খলনায়কের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। গা গরম করা সব ডায়ালগ। খলনায়ককে খতম করতে উদ্যত তিনি। হাতে ধরা অস্ত্রের ঝলকানি। দর্শকাসনে হাততালির ঝড়। সেই ঝড় থিতিয়ে যাওয়ার আগেই মঞ্চের একপাশে আর্ত চিৎকার! সমস্বরে আওয়াজ উঠছে—পালাও পালাও। কেউ আবার বলছে, বাঁচাও বাঁচাও...। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুদ্ধশ্বাস দৌড় দর্শকদের। রাজকুমারের কণ্ঠ রুদ্ধ। মুখ দিয়ে ডায়ালগ আর বেরোচ্ছে না! খলনায়ক ভাবলেন, প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার এটাই মোক্ষম সুযোগ। কিন্তু স্ক্রিপ্টে তো এমন দৃশ্যের উল্লেখ নেই! তা হলে হলো টা কী! রাজকুমার এতবেশি হিমশীতল শান্ত হয়ে গেলেন কেন? মঞ্চের কড়া আলো থেকে নিজেকে রাজকুমারের চোখ বরাবর দর্শকাসনে চোখ ফেলতেই খলনায়কের পিলে চমকানি অবস্থা! ততক্ষণে থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছেন রাজকুমার। দু’জনেই দেখতে পাচ্ছেন, শুঁড় দুলিয়ে তেড়ে আসছে একদল হিংস্র দাঁতাল! মঞ্চ থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে। জীবন বাঁচাতে মঞ্চে সন্ধি রাজকুমার-খলনায়কের। 

    মঙ্গলবার ছিল নববর্ষ। রাতে মেদিনীপুর সদর ব্লকের দে পাড়ায় বসেছিল যাত্রাপালার আসর। আয়োজক দে পাড়া-মন্দিরপাড়া শিবশক্তি সঙ্ঘ। ঘড়িতে তখন রাত ১১টা। পাঁচ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে আসর বেশ জমজমাট। প্রাণ ঢেলে অভিনয় করছেন কুশীলবরা। দাঁতালদের তাণ্ডবে আচমকা ছন্দপতন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দলে প্রায় ১৫টি হাতি ছিল। তাদের দেখেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দর্শকরা। হুড়মুড়িয়ে পালাতে থাকেন সকলেই। ছুটতে থাকেন উদ্যোক্তারাও। বন্ধ হয়ে যায় যাত্রাপালা। দুঃসাহসী যুবকরা মশাল জ্বালিয়ে কোনওরকমে আটকে রাখে হাতির পালকে। খবর পেয়ে দ্রুত চলে আসে হুলা পার্টি। যাত্রাপালা ফের শুরু হয়। কিন্তু সেভাবে আর জমে ওঠেনি। গভীর রাতে জঙ্গলে ফিরে যায় দাঁতালরা। কিন্তু আতঙ্কের রেস থেকে যায় বুধবার পর্যন্ত। 

    এদিন রাতে আবার অর্কেস্টার। জানা গিয়েছে, অনুষ্ঠানটি হলেও ফের হাতির হামলার ভয়ে লোকজন সেভাবে আসেনি। 

    গতকাল রাতে যাত্রাপালা দেখতে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা তপন দে, নয়ন দে’রা। আসরে দাঁতাল হানার বিবরণ দিতে গিয়ে তাঁরা বলছিলেন, ‘বেশ মনযোগ সহকারে পালাগান শুনছিলাম। যাত্রাপার্টির সদস্যদের অভিনয় ছিল অনবদ্য। হঠাৎ, আলো-আঁধারিতে দেখি একদল দাঁতাল মঞ্চের দিকে ধেয়ে আসছে। ওরা যেন বিভীষিকা! ভাগ্যিস, প্রচুর লোক দেখে হাতিগুলির অনুষ্ঠানের ভিতর ঢোকেনি। ঢুকলে বড় বিপদ ঘটে যেত।’ তাঁদের আক্ষেপ, ‘হাতির হানায় ফসল তো নষ্ট হচ্ছেই। কষ্ট ভুলতে আমাদের বিনোদনের আসরেও রেহাই মিলছে না!’    

    কথা হচ্ছিল আয়োজক ক্লাবের সম্পাদক প্রদীপ দে’র সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘যাত্রাপালা আমিও দেখছিলাম। আচমকা দর্শকাসনে তুমুল চিৎকার। সবাই বলছে হাতি...হাতি...। অনেক টাকা খরচ করে মঞ্চ তৈরি করেছিলাম। যাত্রাপালা বুক করেছিলাম। সব বানচাল হয়ে গেল। যাইহোক, অল্পের জন্য সবাই রক্ষা পেয়েছি, সেটাই বড় কথা।’ মেদিনীপুর ডিভিশনের ডিএফও দীপক এম জানিয়েছেন, গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। একদল হাতি ইতিমধ্যেই ঝাড়গ্রাম জেলার দিকে চলে গিয়েছে। কেউ আতঙ্কিত হবেন না। 

    আতঙ্কেই তো গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল দাপুটে রাজকুমারের!  -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)