বোলপুর পুরসভার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করল বিশ্বভারতী
বর্তমান | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের হেরিটেজ কোর জোন সংলগ্ন এলাকায় রেস্তরাঁ নির্মাণে বোলপুর পুরসভা কীভাবে অনুমতি দেয়, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল বিশ্বভারতী। এর উত্তর চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুরসভাকে চিঠিও লিখেছিল। কিন্তু কোনও সদুত্তর না দেওয়ায় পুরসভার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা ঠুকল বিশ্বভারতী। বিষয়টি জানাজানি হতেই সরগরম বোলপুর শহর। সেই আবহে আজ, বৃহস্পতিবার ওই বেসরকারি রেস্তরাঁর মাপজোখ করার সিদ্ধান্ত নিল পুরসভা। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং ও আমিনদের ওই দলে মোট ১০ জন আধিকারিক থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, হেরিটেজ কোর জোন সংলগ্ন এলাকায় বেসরকারি রেস্তরাঁর নির্মাণ কাজ ঘিরে যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত। মূলত, রেস্তরাঁটির তিনদিকেই বিশ্বভারতীর জায়গা। স্বভাবতই, নিজেদের সীমানায় পাঁচিল তোলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাতেই যাতায়াত অবরুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কায় বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন নির্মীয়মান রেস্তরাঁর মালিক। তিনি বিশ্বভারতী, পুরসভা, শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পরিষদ (এসএসডিএ), শান্তিনিকেতন থানা সহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তারই পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে বোলপুর পুরসভা রেস্তরাঁ তৈরির আদৌ কোনও অনুমতি দিয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলে বিশ্বভারতী। এর উত্তর চেয়ে পুরসভা এবং এসএসডিএ-কে চিঠিও লিখেছিল বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিশ্বভারতীকে পুরসভা চিঠির কোনও উত্তর দেয়নি বলে অভিযোগ। তাই মামলার পথে হাঁটল বিশ্বভারতী। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন।
যে জায়গাটিকে ঘিরে বিতর্ক, সেটি ছিল শান্তিনিকেতনের সেন পরিবারের ধীরেন্দ্রমোহন সেনের। পরবর্তীতে তাঁদের থেকে সেই জমি বোলপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুশান্ত ভকতের ছেলে বিকাশ ভকত কিনে নেন। এরপর সেখানে তিনি বহুতল রেস্তরাঁ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। রেস্তরাঁ মালিকের দাবি, সংশ্লিষ্ট এলাকাটি পুরসভার। সেই কারণে সেখানে রেস্তরাঁ করার অনুমতি দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান পর্ণা ঘোষ। কিন্তু বিশ্বভারতীর অভিযোগ, ওই জমি ‘আবাসিক’ চরিত্রভুক্ত। সেন পরিবার যখন ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় যাতায়াতে কখনওই বাধা দেয়নি। কিন্তু বর্তমান জমির মালিক সেখানে বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান খুলতে চাইছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের পরিপন্থী। তাই বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের রাস্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হতে পারে না। এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজের সীমানার চারদিকে পাঁচিল তোলে। আর তাতেই ওই রেস্তরাঁর যাতায়াত অবরুদ্ধ হয়েছে বলে বিকাশবাবুর অভিযোগ। যদিও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও সেটি বোলপুর পুরসভার অন্তর্গত নয়। এই জমি মূলত ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ এলাকায় রয়েছে। এ ধরনের বহু ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্তমানেও রয়েছে। ফলে, পুরসভা আদৌ অনুমতি দিয়েছে কি না, বিশ্ববিদ্যালয় সেই প্রশ্ন তুলেছিল। কারণ, এরকমভাবে অনুমতি দেওয়া শুরু হলে আগামী দিনে অন্যান্যরাও ক্যাম্পাসের ভিতরে বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে বহিরাগতদের বিশৃঙ্খলায় হেরিটেজ তকমা ধরে রাখা কঠিন হবে। এ প্রসঙ্গে পুরসভার চেয়ারম্যান পর্ণা ঘোষ বলেন, বিতর্কের অবসানে যা যা করণীয়, সেগুলি করা হবে।