নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: দক্ষিণবঙ্গের রোগীদের চিকিৎসার অন্যতম ভরসার জায়গা বর্ধমান শহরের খোসবাগান। প্রতিদিনই বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়া, হুগলি থেকে রোগীরা এই শহরে আসেন। তাঁদের উপর কড়া নজর রাখে দালালরা। রোগী ধরে চেম্বার বা নার্সিংহোমে নিয়ে আসতে পারলেই ৪০শতাংশ কমিশন। হাতে হাতে নগদ টাকা। বিনা পরিশ্রমে মোটা টাকা পকেটে ঢোকে। ফায়দা তুলতে বিভিন্ন গ্রামেও তারা চর ছড়িয়ে রেখেছে। তাদের অল্প কিছু টাকা কমিশন দিয়ে বাকিটা দালালরা নিজেদের পকেটস্থ করে। তারা অনেক সময় রোগীদের ভুল জায়গাতেও নিয়ে যায়। ঠিকমতো চিকিৎসা হয় না। অথচ কাঁড়িকাঁড়ি টাকা খরচ হয় বলে অভিযোগ।
মাসখানেক আগে বাইক দুর্ঘটনায় জখম হয়েছিলেন আউশগ্রামের শম্ভু দাস। তাঁর ছেলে রতন দাস বলেন, বাবা দোলের দিন গুসকরা থেকে বাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ করেই উল্টোদিক থেকে আসা একটি বাইকের ধাক্কায় পড়ে যান। কাঁধের কাছে চোট লাগে। এক পরিচিতের মাধ্যমে তাঁকে বর্ধমানের নবাবহাটে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাই। একদিন ভর্তি রেখে বিল করা হয় ২৫ হাজার টাকা। অথচ বাবার শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। পরেরদিন সেখান থেকে বাবাকে বের করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে জানতে পারি আমার ওই পরিচিত কমিশনের ভিত্তিতে বিভিন্ন নার্সিংহোমে রোগী ভর্তি করে। এলাকার কারও ডাক্তার দেখানোর দরকার হলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সে কমিশন নেয়।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আউশগ্রামের ওই রোগী একটি উদাহরণ মাত্র। বহু দালাল খোসবাগান, নবাবহাট ও বর্ধমান স্টেশন চত্বরে ছড়িয়ে রয়েছে। ট্রেন থেকে কোনও রোগী নামলেই তারা কাছে পৌঁছে যায়। তাদের সঙ্গে ভালো চিকিৎসকের যোগাযোগ রয়েছে বলে আশ্বাস দেয়। তারপরই তারা কোনও চেম্বার বা নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে কমিশন তুলে নেয়। শুধু এখানেই তারা থেমে থাকে না। রোগীদের ভুল বুঝিয়ে ল্যাবে নিয়ে গিয়েও কমিশন নিচ্ছে। বর্ধমান জেলা পরিষদের মেন্টর মহম্মদ ইসমাইল বলেন, দালালরা ভালো কোনও চিকিৎসকের কাছে রোগীদের নিয়ে গিয়ে কমিশন নিলে তেমন অসুবিধা হতো না। কিন্তু, তারা সেটা করে না। যেসব চিকিৎসকের নামডাক নেই, তাঁদের কাছে তারা রোগীদের নিয়ে গিয়ে ফায়দা তোলে। আমার পরিচিত অনেক রোগী দালালদের খপ্পরে পড়েছেন। আমরা বিষয়টি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানানোর পর সুরাহা মেলে। কোন চিকিৎসক ভালো চিকিৎসা করেন, তা বাইরে থেকে আসা অনেক রোগীর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সেই সুযোগেই দালালরা ফায়দা তোলে। বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম বলেন, আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ এলেই পদক্ষেপ নিই।