নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিলের জেরে পূর্ব মেদিনীপুরের বহু স্কুলে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। শিক্ষক সঙ্কটে পঠনপাঠন ধাক্কা খাচ্ছে। এই অবস্থায় অনেক পড়ুয়া স্কুলে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে। অভিভাবকরাও গোটা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই পরিস্থিতিতে ড্রপ আউট সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্কুলশিক্ষায় এগিয়ে থাকা পূর্ব মেদিনীপুরের এই চিত্র বেশ উদ্বেগজনক।
ভগবানপুর-২ ব্লকের রাধাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন মাধবপুর গার্লস হাই স্কুলে মোট ন’জন শিক্ষিকা ছিলেন। এখানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পঠনপাঠন হয়। এই স্কুলে মোট ছ’জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। তারমধ্যে পাঁচজন শিক্ষিকা এবং একজন অশিক্ষক কর্মী আছেন। এই মুহূর্তে স্কুলে মাত্র চারজন শিক্ষিকা। অথচ, পঞ্চম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত মোট আটটি শ্রেণি রয়েছে। একসঙ্গে পাঁচ শিক্ষিকা স্কুলে আসা বন্ধ করায় পঠনপাঠনে তার প্রভাব পড়েছে। পড়ুয়ারাও আসতে অনীহা প্রকাশ করছে। এই বিদ্যালয়ে মোট ছাত্রী সংখ্যা ২৬২। বুধবার স্কুলে এসেছিল ১১০ জন। বুধবার ভূপতিনগর থানার পুলিস নাবালিকা বিয়ে এবং পালানোর ঘটনায় সচেতনতামূলক ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ কর্মসূচির জন্য মাধবপুর মহেন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু, সেখানে অর্ধেক পড়ুয়া গরহাজির থাকায় পুলিস অফিসার আমিনুল ইসলাম ও তাঁর টিম লাগোয়া বাহাদুরপুর হাই স্কুলে যায়। ওই স্কুলে মোট ৫৯৮ জন ছাত্রছাত্রী। শিক্ষক-শিক্ষিকা ১৮ জন। প্যানেল বাতিলে এখানকার মোট পাঁচজনের চাকরি গিয়েছে। তারমধ্যে তিন জন শিক্ষক রয়েছেন। পড়ুয়া উপস্থিতির হার এখানেও বেশ কম। এদিন ৩০০ জন উপস্থিত ছিল।
শুধু মাধবপুরের স্কুল কিংবা বাহাদুরপুর হাই স্কুল নয়, চাকরি বাতিলের জেরে বহু স্কুলেই পঠনপাঠনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তার জেরে ছাত্রছাত্রীরাও স্কুলে যাওয়ার উৎসাহ হারাচ্ছে। স্কুল কামাইয়ের কেস হিস্ট্রি থাকা ছাত্রছাত্রীরা অভিভাবকদের জানাচ্ছে, একাধিক বিষয়ের শিক্ষক নেই। তাই পড়াশোনা হচ্ছে না। অভিভাবকরাও এই সুযোগে ঘরের ছেলেমেয়েকে ধান কাটার কাজে লাগিয়ে দিচ্ছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে ড্রপ আউটের সংখ্যা হু-হু করে বাড়তে পারে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা সাড়ে সাতশো। তারমধ্যে দেড় হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়েছে। গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি কর্মী সংখ্যা ৬০০। ফলে, বহু স্কুলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। পঠনপাঠনে তার প্রভাব পড়েছে। অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস সংগঠনের জেলা সম্পাদক মৃন্ময় মাজি বলেন, এই মুহূর্তে স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি বেশ কম। এর একাধিক কারণ আছে। শিক্ষকদের চাকরি বাতিল তার একটা কারণ। এছাড়াও প্রথম পার্বিক পরীক্ষা শেষ হল। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীরা বেড়াতে যাচ্ছে।
মাধবপুর মহেন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের টিআইসি হরিপ্রিয়া সিংহ বলেন, আমাদের স্কুলে মোট ন’জন শিক্ষিকা ছিলেন। তারমধ্যে ২০১৬ সালের প্যানেলে পাঁচজন শিক্ষিকা আছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তাঁরা আসছেন না। আরও একজন অশিক্ষক কর্মী ওই তালিকায় আছেন। এখন ভোকেশনাল কোর্সের তিনজন এবং গেস্ট টিচার একজনকে নিয়ে আমরা ক্লাস নিচ্ছি। ক্লাসে উপস্থিতির হার বেশ কমেছে। নীলপুজো, চড়ক, পয়লা বৈশাখ সহ পর পর ছুটি থাকায় পড়ুয়ারাও ছুটির আমেজে আছে। কেউ কেউ আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে।বাহাদুপুর হাই স্কুলের টিআইসি নিতাইচরণ পাত্র বলেন, আমাদের মোট ১৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁদের মধ্যে তিনজন শিক্ষক ও দু’জন অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। বুধবার স্কুলে স্বয়ংসিদ্ধা কর্মসূচি ছিল। এদিন ৫৯৮ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৩০০ জন উপস্থিত ছিল।