বেহালায় প্রতি মাসে প্রায় ২৫০ মদ্যপ চালক পাকড়াও, তাও ফিরছে না হুঁশ
বর্তমান | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কয়েকদিন আগের ঘটনা। ভিড়ে ঠাসা ঠাকুরপুকুর বাজারে বেপরোয়া গাড়ির মদ্যপ চালকের দৌরাত্ম্যে এক পথচারীর মৃত্যু। আহত আটজন। অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার পরিচালক সিদ্ধান্ত দাস ওরফে ভিক্টো। এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে তোলপাড় চলছে শহরবাসীর মধ্যে এবং টেলিদুনিয়ায়। ঘটনার পর মদ্যপ চালকদের ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করছে কলকাতা পুলিস। কিন্তু তাতেও ফিরছে না হুঁশ। কলকাতা পুলিসের তথ্য বলছে, বেহালা, ঠাকুরপুকুর, হরিদেবপুর এলাকায় প্রতি মাসে প্রায় ২৫০ জন মদ্যপ বাইকচালক ও গাড়ির চালককে পাকড়াও করছে পুলিস। দেদার মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে। তাতেও এই প্রবণতা কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় মা ফ্লাইওভার থেকে পড়ে গিয়ে এক বাইকচালকের মৃত্যুর পর পথ-দুর্ঘটনা রুখতে কড়া বার্তা দেন কলকাতার পুলিস কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মা। তারপর রাতের শহরে দু’দফায় ‘সারপ্রাইজড নাকা চেকিং’ শুরু করে ট্রাফিক গার্ডগুলি। সেই সঙ্গে ভোরের দিকে দু’ঘণ্টা (৪টা থেকে ৬টা) চলে ‘স্পেশাল রেইড’। বেহালা, ঠাকুরপুকুর এলাকা তিনটি ট্রাফিক গার্ডে বিভক্ত। জেমস লং সরণি ট্রাফিক গার্ড, ডায়মন্ডহারবার রোড ট্রাফিক গার্ড এবং ঠাকুরপুকুর ট্রাফিক গার্ড। লালবাজার সূত্রে খবর, ডায়মন্ডহারবার রোড ও ঠাকুরপুকুর ট্রাফিক গার্ডের এলাকা অনেক বেশি। এই দু’টি ট্রাফিক গার্ড এলাকায় প্রতি মাসে গড়ে ১০০জন করে মদ্যপ চালক পাকড়াও করছে পুলিস। দিন পিছু সংখ্যাটা ৩-৪। জেমস লং সরণি ট্রাফিক গার্ড এলাকায় মাসে গড়ে ৫০ জন মদ্যপ চালক ‘ব্রেথ অ্যানালাইজারে’ পজিটিভ আসছেন। অর্থাৎ তাঁরা মদ্যপ চালক।
ট্রাফিক পুলিস সূত্র জানিয়েছে, রাত ১০টা থেকে ১টা—মূলত এই তিন ঘণ্টা রাস্তায় মদ্যপ চালকদের দৌরাত্ম্য চলে। এই তিন ঘণ্টার জন্য বেহালা ও ঠাকুরপুকুর এলাকায় ১২টি জায়গা চিহ্নিত করে ‘স্পেশাল ড্রাইভ’ চালু হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, চিহ্নিত এই জায়গাগুলিতে মদ্যপ বাইকচালকদের দাপট বেশি। তার মধ্যে ৪টি পয়েন্টের কাছাকাছি রয়েছে পানশালা। সেই পয়েন্টগুলিতে বেশি করে নজরদারি চালাচ্ছে পুলিস। সূত্রের দাবি, লাগাতার অভিযান চললেও চিহ্নিত পয়েন্টগুলিতে প্রতি রাতে ৬-৮ জন মদ্যপ চালক ধরা পড়ছেন। তবে শুধুমাত্র রাতের এই তিন ঘণ্টা নয়, পুলিসের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে ভোরের দিকে মদ্যপ চালকদের দাপটও। ডায়মন্ডহারবার ট্রাফিক গার্ডের তরফে ভোর ৪টে থেকে ৬টার মধ্যে ‘রেইড’ চালানো হয়েছিল। ওই সময়ও দু’জন মদ্যপ চালককে পাকড়াও করেছেন উর্দিধারীরা। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা পুলিসকে জানিয়েছেন, রাতে পুলিসের ধরপাকড় এড়াতে মদ্যপ অবস্থায় বাইক নিয়ে তাঁরা ভোরের রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, ঠাকুরপুকুরে দুর্ঘটনা ঘটেছিল সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ।