‘এজেন্সি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে লোক ঢোকানো হয়েছে’, বিজেপির ছকেই অশান্তি: মমতা
বর্তমান | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মুর্শিদাবাদের অশান্তি হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনা নয়। পুরোটাই হয়েছে ‘পরিকল্পনা মফিক’। এবং গোটা ঘটনার পিছনে চক্রান্ত ছিল বিজেপির। কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে এই ছক কষেছে তারা। এই দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর সাফ কথা, যারাই এর নেপথ্যে থাকুক না কেন, ছাড়া হবে না।
ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই প্রতিবাদের সুর চড়ছে দেশজুড়ে। এই প্রেক্ষাপটে বুধবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম, মোয়াজ্জিন ও বিদ্বজ্জনদের নিয়ে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই মঞ্চ থেকেই মুসলিম সমাজের কাছে মমতার স্পষ্ট বার্তা, ‘এই আইন বাংলায় কোনওভাবেই কার্যকর হবে না। তাই সকলে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখুন এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করুন।’ কিন্তু আন্দোলন বা প্রতিবাদকে ঢাল করে সমাজে অশান্তি ও অস্থিরতা তৈরির ‘নীল নকশা’ যে বোনা হয়েছিল, তার তথ্য হাতে এসেছে রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে। বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি গোপন বৈঠক করছেন, সেটা দেশের পক্ষে ভালো হলে অবশ্যই খুশি হব। কিন্তু প্ল্যানিংটা কী? বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেন না! বাংলা সীমান্তবর্তী রাজ্য। কোনও এজেন্সির মাধ্যমে ওখান থেকে (বাংলাদেশ) লোক নিয়ে এসে অশান্তি করানো হয়েছে। সীমান্ত পাহারা দেয় বিএসএফ। ওটা কেন্দ্রের হাতে। তাহলে কীভাবে লোক ঢুকছে? কে অনুমতি দিচ্ছে? বিজেপিই বাইরের থেকে লোক এনে গণ্ডগোল পাকিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। এর কৈফিয়ত দিতে হবে। এলাকা থেকে তথ্য এসেছে, ৫-৬ হাজার টাকা করে দিয়ে বাচ্চাদের দিয়ে ইট ছোড়ানো হয়েছে।’
বিএসএফ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে। সেই সূত্র ধরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধেও তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে ‘কালীদাস’-এর ভূমিকার সঙ্গে এক সারিতে রেখে মমতার কটাক্ষ, ‘যে গাছে বসে আছে, সেই গাছেরই ডাল কাটছে।’ বক্তৃতার ছত্রে ছত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, কেন্দ্রীয় এজেন্সি হোক বা সীমান্ত রক্ষীবাহিনী—সবের উপরই এই মন্ত্রকের আধিপত্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তাঁর অনুরোধ, ‘অমিত শাহকে নিয়ন্ত্রণ করুন।’ তোপ দেগেছেন তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও। সামশেরগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রটি মুর্শিদাবাদ জেলায় হলেও, মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে। সেই আসনের সাংসদ কংগ্রেসের ইশা খান চৌধুরি। তাঁর উদ্দেশে মমতা বলেছেন, ‘জনপ্রতিনিধির কাজ মানুষের পাশে থাকা। রাস্তায় বের হবেন না... এটা আশা করা যায় না।’
রাম আর রহিমের মধ্যে ভেদাভেদ ঘটিয়ে ছাব্বিশের ভোটযন্ত্রে বিজেপি ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বলে দাবি তৃণমূলের। তাই আগামী একটি বছর বিজেপির কোনও প্ররোচনায় পা না দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন মমতা। ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে যে আন্দোলন হচ্ছে, তা দিল্লি দরবারে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন। দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করুন। অন্য রাজ্যে যান। এখানে আমি আছি।’ এমনকী বিরোধীদের মহাজোট ইন্ডিয়ার কাছেও মমতার অনুরোধ, ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ঐকব্যদ্ধভাবে লড়াই হোক। তবে চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতীশ কুমার ক্ষমতার জন্য ‘চুপ’ রয়েছেন বলে মনে করেন তিনি। মমতার প্রত্যয়ী সুর, ‘দিল্লিতে পরিবর্তন হবে। জনবিরোধী আইনগুলিকে বাতিল করা হবে।’