স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন। রিসিভ করতে ওপারের কণ্ঠ জানাল— ‘পরপর ইউপিআই লেনদেনের জেরে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেনের ঊর্ধ্বসীমা পেরিয়ে গিয়েছে। আজকের দিনের জন্য ব্লক করে দেওয়া হয়েছে ডেবিট কার্ড। ব্লক খুলতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।’
এরকমই নানান বিশ্বাসযোগ্য অছিলায় প্রতিনিয়ত টাকা হাতানোর ছক কষছে সাইবার জালিয়াতরা। গ্রেপ্তার হলেও কয়েকমাসেই জেলমুক্তি জামিনে। তারপর ফের একই কীর্তি। বারবার ফোন, মেসেজ কিংবা ইউপিআই আইডির মাধ্যমে জালিয়াতি রুখতে এবার এক অভিনব পদক্ষেপ করল ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (আইফোরসি)। যে কোনও অজ্ঞাত পরিচয় ফোন নম্বর, ই-মেল আইডি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ইউপিআই আইডি’র বৈধতা যাচাই করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। আইফোরসি পোর্টালে গিয়ে সেই তথ্য দিলেই এজেন্সি জানিয়ে দেবে সেই নম্বর বা অ্যাকাউন্ট কোনও সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত কি না। সংশ্লিষ্ট সিম, ই-মেইল আইডি, ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর (ইউআরএল) কিংবা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর যে অসাধু হাতে গিয়েছে, সেই এক ক্লিকেই জানিয়ে দেবে এই বিশেষ পোর্টাল। এককথায়, সাইবার অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতে পারবেন আম জনতাই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, গোটা বিষয়টি এক পোর্টালের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক সিস্টেম বা সিসিটিএনএস-এর সৌজন্যে। কী এই সিসিটিএনএস? মূলত এটি একটি তথ্যভাণ্ডার, যেখানে দেশের সব রাজ্যের পুলিস ও গোয়েন্দা এজেন্সি তদন্তমূলক যাবতীয় তথ্য আপলোড করে। অভিযোগ থেকে শুরু করে অভিযুক্তের গ্রেপ্তারি, ধৃতের নাম, ঠিকানা সহ ফিঙ্গারপ্রিন্ট, রেটিনা সবটাই সংরক্ষিত থাকে এই ডেটাবেসে। ‘হোয়াইট কলার’ ক্রাইমের (সাইবার অপরাধ) ক্ষেত্রে এবার নতুন করে একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অনলাইন জালিয়াতি রুখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া প্রতারণার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তদন্তকারীদের আপলোড করতে হচ্ছে সিসিটিএনএসে। সেই কারণে ফোন, মেসেজ নাকি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরের সূত্র ধরে সেই প্রতারণা হয়েছে, তার বিবরণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতারিতের টাকা কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে, সেই তথ্যও থাকছে পোর্টালে। অভিযুক্ত গ্রেপ্তার না হলেও, শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে তা আপলোড করা এখন বাধ্যতামূলক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতেই এই নয়া উদ্যোগ। সিসিটিএনএস পোর্টালের ‘সাইবার বিভাগ’কে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘আইফোরসি’ ওয়েবসাইটের সঙ্গে। অপরিচিত কোনও মোবাইল ফোন থেকে কল কিংবা মেসেজ এলেই, তা দ্রুত সেই পোর্টাল খুলে যাচাই করতে পারবেন গ্রাহক। ওই নম্বরের মাধ্যমে দেশের যে কোনও প্রান্তে অনলাইন প্রতারণা হয়ে থাকলে (অবশ্যই সেটি থানায় অভিযোগ হতে হবে) তৎক্ষণাৎ সেটিকে ‘সাইবার থ্রেট’ হিসেবে মোবাইলের স্ক্রিনে দেখতে পাবেন সাধারণ মানুষ। প্রয়োজন বুঝলে, ওই নম্বর বা ইউপিআই আইডির বিরুদ্ধে ‘আইফোরসি’ পোর্টালে অভিযোগও দায়ের করতে পারবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগে বহু মানুষ ডিজিটাল অ্যারেস্টের ফাঁদ থেকে রক্ষা পাবেন।