• স্কুলে গেলেও কর্মহারাকে সই করতে দিলেন না হেডমাস্টার
    এই সময় | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া

    সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি চলে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার উপরে ভরসা করে স্কুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক সই করতে দেননি। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার গোপালনগর বিহারীলাল বিদ্যাপীঠের এক শিক্ষক এবং এক গ্রুপ ডি কর্মী ফিরে এসেছেন বাড়িতে। প্রধান শিক্ষকের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে চাকরিহারা শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীকে স্কুলের হাজিরা খাতায় সই করতে দিতে পারি না। চাকরিহারা শিক্ষকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘সই না করতে দেওয়ার নির্দেশ আছে কি?’

    ৩ এপ্রিল সরকারি স্কুলগুলোয় তখন প্রথম সার্বিক মূল্যায়ন চলছিল। তখনই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আসে। বাতিল হয়ে যায় ২০১৬-এর প্যানেল। ইতিমধ্যে পরীক্ষা শেষ হয়েছে। টানা তিনদিন ছুটির পরে বুধবার সমস্ত স্কুল খুলেছে। বিহারীলাল বিদ্যাপীঠের দু’জন শিক্ষক এবং তিনজন গ্রুপ ডি কর্মচারীর চাকরি চলে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে চাকরিহারা শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথার উপরে ভরসা করেই এ দিন বিহারীলাল স্কুলে গিয়েছিলেন শিক্ষক সুশান্ত মাইতি এবং গ্রুপ ডি কর্মচারী তাপস কর। তাঁদের দাবি, এর আগেও দু’দিন তাঁরা স্কুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মাইতি সই করতে না দেওয়ায় ফিরে আসেন। আর কি স্কুলে যাবেন? দ্বিধায় তাঁরা।

    ২০১৯–এ বিহারীলাল বিদ্যাপীঠে নবম-দশমের ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সুশান্ত। এ দিন নির্ধারিত সময়ে স্কুলে পৌঁছন। প্রধান শিক্ষক জানান, তিনি কোনও ভাবেই সুশান্তকে সই করতে দেবেন না। ক্লাসে যাননি সুশান্ত। কিছুক্ষণ স্টাফরুমে বসে থাকেন। বিকেলে স্কুল ছাড়েন। ক্ষুব্ধ সুশান্ত পরে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কথায় স্কুলে গিয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষক আদালত অবমাননার কথা বলছেন। আমি বলি, আদালত অবমাননা যদি হয় তা রাজ্য সরকারের হবে। কিন্তু উনি ওঁর যুক্তিতে অনড়। আমি বলি, সই করতে না দেওয়ার সরকারি নির্দেশ দেখান। উনি দেখাতে পারেননি। এই নিয়ে তিনদিন স্কুলে গেলাম। একদিনও সই করতে পারিনি। তাই ক্লাসেও যাইনি। স্কুলে গিয়েও পড়াতে পারছি না। এ যন্ত্রণা মারাত্মক।’ বুধবার তাপসকেও হাজিরা খাতায় সই করতে দেননি প্রধান শিক্ষক। ‘অপমানিত’ তাপস বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীই তো বলেছিলেন। কাল সিদ্ধান্ত নেব আর স্কুলে যাব কিনা।’

    প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বলছেন, ‘প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করতে পারব না। তবে ওঁরা যে ক’দিন স্কুলে এসেছেন, আমি একটি খাতায় সেই সংক্রান্ত নোট রেখেছি। ওঁরা নিজেরা ক্লাসেও যাননি। বেশ কিছুক্ষণ স্কুলে থেকে বাড়ি ফিরে যান।’

    স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ১৪০০। এই মুহূর্তে শিক্ষকের শূন্যপদ ১৫। এত কম শিক্ষক নিয়ে স্কুল চালাতে সমস্যায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্কুলের একমাত্র সংস্কৃতের শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির সংস্কৃত বিষয়ের খাতা কে দেখবেন, তা নিয়ে চিন্তায় প্রধান শিক্ষক। একাদশ–দ্বাদশে বন্ধ রয়েছে সংস্কৃতের ক্লাসও।

  • Link to this news (এই সময়)