বরুণ সেনগুপ্ত: মুর্শিদাবাদে অশান্তির আবহে বিজেপি নেতাদের কেউ বলছেন বাস থেকে নামিয়ে মারব, কেউ বলছেন বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এনে মুর্শিদাবাদ খালি করে দেব। এরকম এক পরিস্থিতিতে এবার হিন্দুদের এবার হাতিয়ার কেনার নিদান দিলেন দিলীপ ঘোষ। এখানেই শেষ নয়, সেক্যুলারিজমের প্রবক্তাদের হিন্দুদের ও দেশের শত্রু বলে বাজার গরম করলেন বিজেপি নেতা। গতকাল কাঁচড়াপাড়ায় এক সভায় ওইসব বিস্ফোরক মন্তব্য করেন দিলীপ ঘোষ।
পূর্ব বাংলার মানুষদের এপারে আসার কথা টেনে এনে দিলীপ ঘোষ বলেন, যারা সাচ্চা হিন্দুর বাচ্চা ছিল তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে এপারে চলে এসেছিলেন। তারা লুঙ্গি পরে আসেনি। ধুতি পরে এসেছেন। ভুলে যাবেন না আমরা দেশটা ছেড়ে দিয়েছি এখানে শান্তিতে থাকব বলে। হিন্দু হয়ে থাকব বলে। সেক্যুলার হয়ে থাকতে হলে ওখানে থাকতাম। ধর্মের বিনিময়ে, পূর্বপুরুষের পরিচয়ের বিনিময়ে আমরা সম্প্রীতি করব না। আজ আবার সক্য়ুলারিজমের বাণী দেওয়া হচ্ছে। এখন বলা হচ্ছে মুর্শিদাবাদ ছাড়ো। গ্রেট ক্য়ালকাটা কিলিংয়ের সময়ে সুরাবর্দির সঙ্গে জ্যোতিবাবুরা ধর্মতালায় শহিদ মিনারের নীচে ঝান্ডা বেঁধেছিল। লাল আর সবুজ। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ে ৩ দিনে ৩০ হাজার হিন্দুরে মেরে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজ তার থেকেও ভয়াবহ অবস্থা। সিদ্দিকুল্লা বলছে হাজার হাজার লোককে রাস্তায় বসিয়ে রাস্তা জ্যাম করে দেব। করে দিলে কী করবেন আপনারা? কলকাতাকে ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘিরে নিয়েছে। একটা হিন্দুও পালাতে পারবে না। পুলিস খুঁজে পাবেন না।
হিন্দুদের শক্তি সঞ্চয়ের আহ্বান করে দিলীপ ঘোষ বলেন, হিন্দুরা বাড়িতে টিভি কিনছে, ফ্রিজ কিনছে, নতুন নতুন আসবাব কিনছে কিন্তু একটাও হাতিয়ার নেই। বলছে হাতিয়ার আমাদের কী হবে! কিছু হলেই পুলিস পুলিস! পুলিসের বয়ে গিয়েছে তোমাদের বাঁচাতে। ভগবান তোমাদের বাঁচাবে না। গোপাল পাঁঠার কথা কেন বারবার বলা হয়েছে? তিনি খাসিও কাটতেন, খাসি যারা খায় তাদেরও কাটতেন। দুটো কাটার মতো হিন্দুদের তৈরি হতে হবে। দশ বছর আগে যখন রামনবমীর শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল তখনও হিন্দু বাঙালি জানে না রামনবমী কী। সব জায়গায় হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কাজ করতাম। আজ তা পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ হিন্দু বুঝেছে তাদের এক হয়ে বাঁচতে হবে। দুর্বলের সঙ্গে ভগবানও থাকেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন থাকবেন?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে দিলীপ ঘোষ বলেন, মমতা বলছেন, আমি কিছু জানি না। বাংলাদেশ থেকে নাকি লোক এসেছে। বিজেপি দাঙ্গা বাধিয়েছে। বিজেপি নাকি ২৫ হাজার শিক্ষকের চাকরিও খেয়ে নিয়েছে। আপনি কিছুই জানেন না দিদি। আপানার ডান দিকে বসে কেষ্ট ৫০০ কোটি টাকা খেয়ে নিল একটা ঢেকুরও তুলল না। বাঁ দিকে বলে পার্থ ৩৫০ কোটি টাকা খেয়ে নিল আপনি জানতেও পারলেন না। সামনে আলু আর পেছনে বালু বসে টাকা খেয়ে নিল আপনি জানতেও পারলেন না। আপনি খালি কাটমানি জানেন। আর ভাইপোকে কী করে মুখ্যমন্ত্রী করবেন সেটা জানেন। এই চালাকি আর বেশিদিন চলবে না। হিন্দুরা বোকা নয়। তাই গ্রামগঞ্জে তারা জেগে উঠেছে।
ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিঁধে দিলীপ ঘোষ বলেন, এরা আমাদের সেক্যুলারিজমের গুলি খাইয়েছে। সেলিম মোথাবাড়ি গিয়েছেন, সম্প্রীতির মিছিল করছেন। কারণ হিন্দুরা মার খেয়েছে, সম্প্রীতির মিছিল হবে। মার খাব, মন্দির জ্বালাবে-কেন সম্প্রীতি করব! কে মাথার দিব্বি দিয়েছে হিন্দুদের সম্প্রীতি করার? সেক্যুলারিজমের গুলি খেয়ে খেয়ে ভারত আজ দশভাগ হয়ে গিয়েছে। এখনও ওপার বাংলার ঘরবাড়ি লুট হচ্ছে। আর এখানে সম্প্রীতির গল্প শুনছি আমরা? ওপারে মন্দির ভাঙা হচ্ছে, এপারেও মন্দির ভাঙা হচ্ছে। কী পার্থক্য় থাকল ওপার আর এপারের? ওপার থেকে এসেছিলাম ধর্ম রক্ষার জন্য। তখনও এই কমিউনিস্ট হারামজাদারা স্লোগান দিয়েছিল, একই বৃন্তে দুটি কুসুম..। এখনও তারা সম্প্রীতি শেখাচ্ছে। এই হারামজাদারা আমাদের অনেক সর্বনাশ করেছে। যে সম্প্রীতির কথা বলবে তাকে আপনি সমাজবিরোধী বলে মনে করবেন। সে হিন্দুর এক নম্বরের শত্রু, দেশের শত্রু।