• ‘রোজ ঘুম ভাঙে আতঙ্কে, কী খেতে দেবো ছেলেকে!’ চিন্তায় চাকরিহারা শিক্ষকরা
    এই সময় | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে তাঁদের৷ আদালতের নির্দেশে আচমকা চাকরি হারিয়েছেন ওঁরা। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দেশের রাজধানী দিল্লিতে যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসে নিজেদের যন্ত্রণার কথা জানালেন চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক–শিক্ষিকারা।

    সোমবার কলকাতার ধর্মতলায় ওয়াই চ্যানেল থেকে বাস ছাড়ে এই শিক্ষকদের নিয়ে। বুধবার সকালে দিল্লি পৌঁছয় সেই বাস। এ দিন দুপুর দুটো থেকে যন্তর মন্তরে ধর্না শুরু করেন তাঁরা। বিকেলের দিকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর অফিসে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন৷ বুধবার রাতেই দিল্লি থেকে বাস রওনা দিয়েছে কলকাতার উদ্দেশে। কয়েকজন অবশ্য থেকে যাচ্ছেন দিল্লিতেই।

    আগামী কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে সেখানকার ছাত্র, শিক্ষকদের নিজেদের কথা জানানোর পরিকল্পনা তাঁদের। এ বাদে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির সময়ও চাইবেন তাঁরা। হারানো চাকরি ফেরত পাওয়াই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। এ দিন যে সময়ে দিল্লিতে এই ধর্না চলে, তখন কলকাতার ওয়াই চ্যানেলেও অবস্থানে এই কর্মহারাদের সতীর্থরা। সেখানেও ধর্না–অবস্থান থেকে হকের চাকরি ফেরানোর দাবি ওঠে।

    এই গরমে কতটা কঠিন ছিল এ কাজ? দিল্লিতে ধর্নায় যোগ দিতে যাওয়া বাংলার চাকরিহারা শিক্ষিক অনিন্দিতা চৌধুরী একটু থমকালেন৷ কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা অনিন্দিতা ও তাঁর স্বামী দু’জনেই সুপ্রিম–রায়ে চাকরি হারিয়েছেন৷ অনিন্দিতা শিক্ষকতা করতেন সত্যনারায়ণ গার্লস হাইস্কুলে আর স্বামী নবদ্বীপের ভালুকা হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন৷ ঘরে ছ’বছরের সন্তান৷ কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

    অনিন্দিতার প্রশ্ন, ‘প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙে আতঙ্কে, কী ভাবে খাবার জোগাব ছেলের জন্য? কী ভাবে ওর পড়াশোনা চলবে? আমরা চাই, আদালতে উপযুক্ত তথ্য জমা দিয়ে রাজ্য সরকার আমাদের চাকরি ফেরাক। অন্তত আমাদের সন্তান ও পরিজনের দিকে তাকিয়ে এই পদক্ষেপ হোক দ্রুত।’ যন্তর মন্তরের ধর্নায় বসা চাকরিহারা শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডলের কথায়, ‘আমরা অপরাধ করিনি। তবু শাস্তি পেতে হচ্ছে। যারা টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছে, যারা নিয়মভঙ্গ করেছে, তাদের শাস্তি হোক। এটাই আমরা চাই।’

    এ দিকে কলকাতাতেও ধর্না মঞ্চে স্লোগান চলছিল উচ্চ স্বরে। কেন নেতাদের বাঁচিয়ে সাধারণ ‘যোগ্য’ শিক্ষকের চাকরি কেড়ে নেওয়া হলো — এ প্রশ্নের সঙ্গেই স্লোগান ওঠে ‘ভলান্টারি’ শিক্ষকতা না করার কথা জানিয়ে। ধর্না থেকে চাকরিহারা শিক্ষক ওবাইদুর রহমান বলেন, ‘বিচারপতি থেকে নেতা — অনেকের বাড়িতেই বান্ডিল বান্ডিল নোট মেলে। তাঁরা কিন্তু ছাড় পেয়ে যান। বিচার হয় না। আর আমাদের বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে। এরপরে কী ভাবে ন্যায়শিক্ষা দেবো পড়ুয়াদের?’ আজ এই শিক্ষকদের সকলে সুপ্রিম কোর্টের দিকেই ফের তাকিয়ে। যদি কোনও আশার আলো দেখা যায়!

  • Link to this news (এই সময়)