• কেন রাস্তায় নেই কংগ্রেস! মমতার খোঁচায় সরব ‘হাত’
    এই সময় | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনায় কংগ্রেসের ভূমিকাকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, মুর্শিদাবাদ জেলার যেখানে গন্ডগোল হয়েছে, তা কংগ্রেসের দখলে থাকা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। তা হলে অশান্তি থামাতে কংগ্রেস কেন পথে নামল না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি অবশ্য মুর্শিদাবাদের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় তুলেছে।

    বুধবার নিজের দলের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান দিয়ে মমতা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁরাও। শুধু কংগ্রেস নয়, নাম না–করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের অশান্তির জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিশানা করেছেন আইএসএফ–কেও। বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম, মুয়াজ্জিনদের সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি দাবি করেন, যেখানে গন্ডগোল হয়েছে, সেটা ভৌগোলিক ভাবে মুর্শিদাবাদ জেলায় হলেও কংগ্রেসের দখলে থাকা মালদা দক্ষিণ লোকসভা এলাকার অন্তর্ভুক্ত। ঘটনা হলো, ফরাক্কা, সামশেরগঞ্জের যে সমস্ত এলাকায় গোলমাল হয়েছে, তা মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে হলেও মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে।

    ২০২৪ লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে সাংসদ হয়েছেন ঈশা খান চৌধুরী। তাই গোটা ঘটনায় কংগ্রেস যে দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে না, সেই বার্তা দিতে মমতা বলেন, ‘ওয়াকফ নিয়ে কিছু অশান্তি হয়েছে। প্ররোচনামূলক কথাবার্তা হয়েছে। যেখানে গন্ডগোল হয়েছে, সেটা কংগ্রেসের জেতা আসন।’ এরপরেই কংগ্রেসকে সংসদীয় রাজনীতির প্রাথমিক শর্ত স্মরণ করিয়ে মমতা বলেন, ‘জিতবার সময়ে তারা জিতবে, আর দাঙ্গা হলে রাস্তায় বেরোবে না, কন্ট্রোল করবে না! জনপ্রতিনিধিদের মানুষের সঙ্গে থাকা উচিত।’

    মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের জবাবে অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘ভোট রাজনীতি করতে গিয়ে শুভ আর অশুভর পার্থক্যই ভুলে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমরা চাই, তাঁর শুভবুদ্ধির উদয় হোক। সেই সঙ্গে তাঁর বাংলার ভূগোলটাও পড়া উচিত। জেলা আর লোকসভা কেন্দ্রের পার্থক্য উনি বোঝেন না।’

    শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারের মতো বঙ্গ–বিজেপির শীর্ষ নেতারা মুর্শিদাবাদের অশান্তি শুরুর দিন থেকেই অভিযোগ তুলেছেন, তৃণমূলের প্রত্যক্ষ মদতে রাজ্যের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সুকান্তর দাবি, ‘নিয়োগ দুর্নীতিতে ২৬ হাজার তরুণ–তরুণীর চাকরি যাওয়ার ঘটনা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি করেছে তৃণমূল।’ বিজেপি নেতৃত্বের এই দাবি যে ভিত্তিহীন, তা প্রমাণ করতে মমতা এ দিন বলেন, ‘বিজেপির জেনে রাখা উচিত, তৃণমূল গন্ডগোল পাকালে তৃণমূলেরই তিনজন বিধায়কের বাড়ি আক্রান্ত হতো না। তৃণমূলের পার্টি অফিসও ভাঙা পড়ত না।’

    দিন দুয়েক আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে হিংসাত্মক আন্দোলন হয়েছে। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। মুখ্যমন্ত্রী যার নিন্দা করে এ দিন বলেন, ‘ভাঙড়ে করার প্রয়োজন ছিল না। যারা করেছে, অন্যায় করেছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছে। একটা গাড়ি কিনতে ৪০ লাখ টাকা লাগে। গাড়ির পর গাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এ সব কী! কেন হবে এগুলো?’ রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সরাসরি কোনও দলের নাম না–করলেও ভাঙড়ের ক্ষেত্রে তিনি নিশানা করেছেন আইএসএফ–কেই। কারণ, ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রটি ২০২১ থেকে আইএসএফের দখলে।

    সরাসরি কারও নাম না–করেই তৃণমূল সুপ্রিমোর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘সব সমাজে কিছু গদ্দার থাকে! ওরা টাকা নিয়ে যে ডালে বসে, সে ডালই কাটে। এত লোভ করার কী দরকার? আমি দেখেছি, যখন এ রকম কোনও ইস্যু আসে, কেউ নিজের আইডেন্টিটি বাড়ানোর জন্য এটাকে অপব্যবহার করে। আমি এটা পছন্দ করি না। আমাদের যদি কেউ করে, আমি তারও নিন্দা করি।’ আইএসএফ নেতৃত্ব ছাড়াও মমতা আর কাউকে এই মন্তব্যে নিশানা করেছেন কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ভাঙড়ের আইএসএ‍ফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির প্রতিক্রিয়া, ‘আইএসএফ হিংসার রাজনীতি করে না। সিসিটিভির ফুটেজ বার করা হোক। আমাদের দলের কোনও ছেলে যুক্ত থাকলে আমরাই তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে আসব। ভাঙড়ে তৃণমূল কংগ্রেস দুর্বল। রাজনৈতিক ভাবে আমাদের আটকাতে পারে‍নি, এখন মিথ্যে মামলা দিয়ে আটকানোর চক্রান্ত করেছে।’

  • Link to this news (এই সময়)