• SSC: OBC মামলার নিষ্পত্তি ছাড়া নতুন নিয়োগ কি সম্ভব?
    এই সময় | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • SSC–র ২০১৬–এর বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। যদিও বৃহস্পতিবারই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনের ভিত্তিতে কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, 'যোগ্য'রা স্কুলে যেতে পারবেন।  বেশ কিছু শর্তও বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শর্ত হলো, ৩১ মে-র মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে রাজ্যকে।

    স্বাভাবিক ভাবেই নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সাংবাদিক সম্মেলনে ‘ফ্রেশ সিলেকশন’-এর কথা বলেছেন। কিন্তু সেই ফ্রেশ সিলেকশন নিয়ে কারও কারও প্রশ্ন, রাজ্যের OBC মামলার নিষ্পত্তি না হলে আদৌ নতুন নিয়োগ সম্ভব? আইনজীবীদের একাংশ যদিও জানাচ্ছেন, কোনও সমস্যা নেই। আবার একটা অংশ মনে করছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে নানা জটিলতা রয়েছে।’ এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারকে যদিও ফোন করা হলে তিনি ‘ব্যস্ত আছেন’ বলে জানিয়েছেন।

    ওবিসি সংক্রান্ত এই মামলার ভবিষ্যৎ ঝুলে থাকায় নতুন করে রাজ্যের সরকারি চাকরি, স্কলারশিপ, কিছু ক্ষেত্রে ভর্তির ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই রায়ের পরে রাজ্যের পাবলিক সার্ভিস কমিশনও একাধিক পরীক্ষা স্থগিত রেখেছে। ২০২৪ সালের WBCS পরীক্ষা এখনও হয়নি। নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে গেলে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়েও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। হাইকোর্টের রায়ের জন্য তা সম্ভব হয়নি। আবার সেই বিষয় এড়িয়ে যদি নিয়োগ হয়, সেক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

    ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ কোঅপরেটিভ সোসাইটির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যেখানে কলকাতা হাইকোর্টের কাছে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে। আদালতের নির্দেশ কেন অমান্য করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে মুখ্যসচিবকে তলব করেছিল হাইকোর্ট। অভিযোগ ছিল, কোর্টের নির্দেশ অমান্য করেই নিয়োগ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ভুল স্বীকার করেছিলেন মুখ্য সচিব।

    ওবিসি মামলার সঙ্গে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে যুক্ত এক আইনজীবী বলছেন, ‘এর সঙ্গে ওই মামলার সম্পর্ক নেই। যদি থাকেও সে ক্ষেত্রে, ২০১০ সালের আগে যে সমস্ত সার্টিফিকেট (ওবিসি) ইস্যু হয়েছে, তাঁরা ওবিসি হিসেবে এই চাকরিতে বসার সুযোগ পাবেন।’ ওবিসি মামলায় মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘হ্যাঁ নিয়োগ সম্ভব। যেটা রটনা হচ্ছে সেটা ভুল। সুপ্রিম কোর্ট এই সংক্রান্ত কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি, নিয়োগ প্রক্রিয়া হতে কোনও বাধা নেই। যাঁরা সংরক্ষণ পাচ্ছিলেন, ওবিসি সাব-ক্যাটিগরি হিসেবে তাঁরা পাবেন না। অর্থাৎ, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সার্টিফিকেট পাওয়া প্রার্থীরা ওবিসি হিসেবে পরীক্ষায় বসতে পারবে না। তাঁদের জেনারেল ক্যাটিগরিতে পরীক্ষায় বসতে হবে।’ এ ব্যাপারে জানতে রাজ্যের আইন মন্ত্রী মলয় ঘটককে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজেরও।

    উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ গত বছর ওবিসি মামলার রায় দেয়। ২০১০ সালের পরে তৈরি হওয়া সমস্ত সার্টিফিকেট বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের মূল বক্তব্য ছিল, কাদের এই সংরক্ষণের তালিকায় আনা হবে, সে জন্য প্রয়োজনীয় যে সমীক্ষা হওয়ার কথা, তা হয়নি। ওবিসি কী ভাবে বাছাই করা হবে, সে ব্যাপারে ১৯৯২ সালের সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারপতির বেঞ্চের রায় মানা হয়নি বলেও হাইকোর্ট জানায়। হাইকোর্টের রায়ের ফলেই প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বৈধতা হারায়। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করেই রাজ্য যায় সুপ্রিম কোর্টে।

  • Link to this news (এই সময়)