এই সময়, মালদা: প্রাণভয়ে ছাড়তে হয়েছে নিজেদের ভিটেমাটি। আশ্রয় নিতে হয়েছে অন্য জেলায়। মাথার উপরে ছাদ বলতে স্কুলঘর। সেটা যেন কারাগারের মতো মনে হচ্ছে মুর্শিদাবাদের ঘরছাড়াদের। তাঁরা চাইছেন নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে।
মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান অশান্ত হয়ে উঠতে দলে দলে মানুষ ঘর ছেড়েছিলেন। তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন মালদায়। বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর হাইস্কুল হয়ে উঠেছে ত্রাণশিবির। এখানে আশ্রয় নেওয়া অনেক মানুষ এ বার বাড়ি ফিরে যেতে চাইছেন। তাঁদের আত্মীয়রা দেখা করতে এখানে এসেছিলেন। সবাই ভিতরে ঢুকতে পারেননি কড়া পুলিশি প্রহরার জন্য।
এখানে আশ্রয় নেওয়া মুর্শিদাবাদের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘যখন অশান্তি চলছিল, তখন এলাকা থেকে পালিয়ে মালদার এই স্কুলে এসে প্রাণে বেঁচেছি। কিন্তু এখন এই স্কুলের গুমটি ঘরে থাকতে আর মন চাইছে না। যত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ততই ভালো। বাড়ি ফিরতে চাই আমরা।’ শিবিরে থাকা আর একজন বলেন, ‘স্কুল যেন আমাদের কাছে কারাগারে পরিণত হয়েছে। বন্দি অবস্থায় থাকতে ভালো লাগছে না। আমাদের আত্মীয়দের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’
মালদার স্কুলে আশ্রয় নেওয়া অনেকে ধুলিয়ান পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এসেছেন। এঁদের একটা অংশ মহিলা। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের এলাকা যদি শান্ত হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে আমরা ফিরতে চাই। এখানে কোনও খবর পাচ্ছি না। বন্দি অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে। এখানে খাবারদাবার পাচ্ছি, কিন্তু চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, ওষুধ নেই। নিজের বাড়ি ছেড়ে কতদিন আর থাকা যায়।’
এই ঘরছাড়া মানুষ কবে নিজের ভিটেয় ফিরবেন? এ নিয়ে চাপানউতোর চলছে। বৈষ্ণবনগর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক চন্দনা সরকার বলেন, ‘যাঁরা বাড়ি ফিরে যেতে চাইছেন, তাঁদের একটা অংশকে ভয় দেখিয়ে বিজেপি নিরস্ত করছে। উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ এই স্কুলে এসে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠছে।’
উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘এখনও মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি এলাকা অশান্ত রয়েছে। মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে দেওয়া হচ্ছে না। কৃষকদের জমিতে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যেই জোর করে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের ফেরানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। পুরো বিষয়টি জানানো হবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে।’
দক্ষিণ মালদার কংগ্রেস সাংসদ ঈশা খান চৌধুরী বলেন, ‘অদ্ভুত ভাবে আমাকে পারলালপুর হাইস্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অথচ বিজেপি সাংসদ এই স্কুলে ঢুকতে পেরেছেন। বাইরে থেকে কিছু মানুষ চিৎকার-চেঁচামেচি করে এখানকার পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যাঁরা এই কাজ করছেন, তাঁরা বিজেপির স্থানীয় কর্মী-সমর্থক বলে জানতে পেরেছি। বিপন্ন মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।’
রাজনৈতিক নেতাদের উপরে অবশ্য বিশেষ ভরসা করছেন না ত্রাণ শিবিরে থাকা মানুষজন। তারা চাইছেন না, কেউ-ই এখানে আসুন। কোনও দল নয়, বুধবার একটি আশ্রম ও গ্রামবাসীর দেওয়া খিচুড়ি, তরকারি খেয়ে দিন কাটিয়েছেন তাঁরা।