• অবহেলায় পড়ে গঙ্গারামপুরের বখতিয়ার খিলজির সমাধিস্থল
    এই সময় | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • শীতল চক্রবর্তী, বালুরঘাট

    বাংলার ইতিহাসে এক অন্যতম নাম বখতিয়ার খিলজি। পলাশীর যুদ্ধের আগেও একবার বাংলার ইতিহাসে বিরাট বদল এসেছিল। আর সেই বদলের কারিগর ছিলেন ইখতিয়ারউদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি। কিন্তু অবহেলায় পড়ে রয়েছে তাঁর স্মৃতি।

    আজ বাংলা তাঁকে ভুলতে বসেছে। তবে কি কালের গতিতে চাপা পড়ে যাবে ইতিহাসের এই অধ্যায়? প্রশ্ন নাগরিক মহলে। মৃত্যুর পরে খিলজিকে সমাধিস্থ করা হয় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরের পীরপাল গ্রামে। সেই সমাধিস্থল আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে বসেছে। বহু ইতিহাসের সাক্ষী সেই জায়গায় কয়েকটা ভাঙা ইট ছাড়া কিছুই পড়ে নেই।

    সমাধির দেওয়ালের একাংশ ধসে পড়েছে, চারপাশে ভরে গিয়েছে আগাছা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যাচ্ছে খিলজির স্মৃতি। পীরপালের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘এখানকার মানুষজন এটি ‘পীরবাবার সমাধি’ বলেই জানেন। এই সমাধিস্থলের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গ্রামে কেউ কাঠের খাটে বা চৌকিতে ঘুমোন না। মাটি দিয়ে মেঝেতেই খাট বানিয়ে তাতে শুয়ে থাকেন। তাঁদের বিশ্বাস, ‘কাঠের খাটে ঘুমোলে তাঁরা পড়ে যেতে পারেন।’

    ১২০৫ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খিলজি এখানে এসেছিলেন বঙ্গ জয়ের উদ্দেশ্যে। লখনৌ ও দেবকোটে প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর রাজ্য। কিন্তু তিব্বত অভিযানে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার পর তাঁর ‘বিশ্বস্ত’ সেনাপতি আলি মর্দানের বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি নিহত হন। তাঁকে কবর দেওয়া হয় বর্তমান গঙ্গারামপুরের পীরপাল গ্রামে। কিন্তু আজ সেই সমাধিস্থল শুধুই অতীতের ছায়ামাত্র।

    এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক সময়ে এটি ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান থাকলেও বর্তমানে প্রশাসনের অবহেলায় তার জরাজীর্ণ দশা। ইতিহাসবিদ সমিত ঘোষ, জয়ন্ত আশ্চর্যদের মতে, ‘শুধু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আমরা এ রকম একটি ঐতিহাসিক স্থানের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছি। বখতিয়ার খিলজির সমাধিস্থল সংরক্ষণ করা আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’

    প্রতি বছর বৈশাখ মাসের বৃহস্পতিবারে এখানে বিশাল মেলা বসে। শুধু ধর্মীয় কারণেই নয়, ঐতিহাসিক স্থান হিসেবেও বহু পর্যটক এখানে আসেন। কিন্তু ভগ্নদশা দেখে তাঁরাও হতাশ হন। স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার রায়ের কথায়, ‘এই সমাধিস্থল শুধু আমাদের গ্রামের নয়, গোটা বাংলার ইতিহাসের প্রতীক।’ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি চিন্তামণি বিহা বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নজরে রেখেছি। দ্রুত সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)