• এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের আড়ালে জালিয়াতি, হাওয়ালায় আজ়াদের লেনদেন আড়াই কোটি
    এই সময় | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: এক্সপোর্ট–ইমপোর্ট ও বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের বোর্ড থাকত বাড়ির বাইরে। লোকে জানতেন, বিরাটির আজ়াদ মল্লিক ওই ব্যবসাই করেন। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি–র দাবি, ওই দুই ব্যবসার আড়ালে আদতে জাল পাসপোর্টের চক্রই চালাচ্ছিলেন আজ়াদ। আদতে তিনি বাংলাদেশি। গত ১০ বছর ধরে ভারতে বসে তিনি জাল পাসপোর্ট বানাচ্ছিলেন। হাওয়ালা মারফত টাকা লেনদেন করতেন। তাঁর একাধিক অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। আদালতে পেশ করে আজ়াদের নামে এই অভিযোগ এনেছে ইডি।

    মঙ্গলবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটি, নদিয়ার গেদে সীমান্তবর্তী এলাকা, কলকাতার বেকবাগান–সহ আটটি জায়গায় জাল পাসপোর্ট মামলায় তল্লাশি চালায় ইডি। বিরাটিতে থাকছিলেন আজ়াদ। জাল পাসপোর্ট মামলাতে তাঁকে এবং গেদে থেকে তাঁর এক সহযোগী অলোক নাথকে সল্টলেকের সিজিওতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রে খবর, দু'জনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা পরিবর্তন করা হয়। গভীর রাতে অাজ়াদকে গ্রেপ্তার করা হয় (বুধবার 'এই সময়'–তে ধৃত হিসেবে ভুলবশত অলোকের নাম বেরোনোর জন্য আমরা দুঃখিত)। বিচারভবনে মঙ্গলবার রাত পৌনে দুটো নাগাদ পেশ করা হয় আজ়াদকে। তাঁকে একদিনের জন্য ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। ফলে বুধবার সকালে আবার আজ়াদকে পেশ করা হয়। তাঁকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রাখতে বলেছে আদালত। ইডি–র দাবি, তাঁর স্ত্রী ও সন্তান বাংলাদেশে থাকেন। আজ়াদের দু'টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি।

    তদন্তে নেমে আজ়াদ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য এসেছে ইডি–র হাতে। প্রথমত, তাঁর একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কখনও ২০ লক্ষ কখনও তার বেশি টাকা জমা পড়েছে। জাল পাসপোর্ট মামলায় এই দুর্নীতির টাকা কোথায় কোথায় কী ভাবে ব্যবহার হয়েছে, এই টাকা কারা জমা দিতেন, কোথা থেকে কারা সেই টাকা তুলে নিতেন — তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের দাবি, আজ়াদ এই পাসপোর্ট জালিয়াতিতে মিডলম্যান হিসেবে কাজ করতেন। জাল পাসপোর্ট বানানোর নথি আসত তাঁর মোবাইলে। তা ছাড়াও আধার, ভোটার কার্ডও নাকি তিনি বানিয়ে দিতেন।

    প্রাথমিক জেরায় ইডি জানতে পেরেছে, জাল পাসপোর্ট বানাতে আজ়াদ পাঁচ থেকে ৩০–৪০ হাজার টাকা নিতেন। এর জন্য তাঁকে অগ্রিম দিতে হতো। কারও যাতে সন্দেহ না হয়, তার জন্য এক বছর অন্তর ভাড়া বাড়ি বদলে ফেলতেন তিনি। তল্লাশি চালিয়ে আজ়াদের বাড়ি থেকে তাঁর আধার, ভোটার কার্ড ও পাসপোর্ট পাওয়া গিয়েছে। দেখা গিয়েছে, আজ়াদের আধার ও পাসপোর্টে আলাদা জন্ম তারিখ রয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, বাংলাদেশেও নাকি এই চক্রের এজেন্ট রয়েছে। বেআইনি ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশিদের অনেকেই আজ়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। আজ়াদের হাত ধরে কত বাংলাদেশি ভারতে ঢুকেছেন, জানতে চায় ইডি।

  • Link to this news (এই সময়)