• আন্দোলনে ধাক্কা খেয়েছে 'বিড়ি শিল্প', ক্ষতির মুখে শ্রমিকরা...
    আজকাল | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত কয়েকদিন ধরে উত্তপ্ত ছিল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। জেলা প্রশাসনের সময়মতো হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতেই সামনে আসছে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য। 

    কিছু ভুয়ো তথ্য এবং গুজবের জেরে মুর্শিদাবাদের সুতি, সামশেরগঞ্জ, রঘুনাথগঞ্জ এলাকায় যে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল তার ফলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই জেলার প্রধান এবং সব থেকে বড় শিল্প, বিড়ি তৈরির কাজ। 

    মুর্শিদাবাদ তথা রাজ্যের 'বিড়ি হাব' হিসেবে পরিচিত জঙ্গিপুর মহকুমার সুতি, সামশেরগঞ্জ, ফরাক্কা এবং রঘুনাথগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। এই সমস্ত এলাকার প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিড়ি তৈরি এবং বিড়ি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। 

    কিন্তু গত কয়েকদিনের অশান্তির জেরে সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ান, সুতি-সহ আশেপাশের একাধিক এলাকার প্রায় সমস্ত বড় বিড়ি কারখানা বন্ধ রয়েছে। কাজ পাচ্ছেন না বিড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত কয়েক লক্ষ শ্রমিক। যাঁদের অধিকাংশই মহিলা। দিন আনা, দিন খাওয়া এই সমস্ত বিড়ি শ্রমিকদের পরিবারের এখন একটাই প্রার্থনা, দ্রুত মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক এবং চালু হোক বিড়ি তৈরির কারখানাগুলি। 

    জেলার অন্যতম বৃহৎ বিড়ি কারখানার মালিক তথা ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, এই রাজ্যের সমস্ত জেলায় যত বিড়ি তৈরি হয় তার দ্বিগুণ বিড়ি তৈরি হয় কেবলমাত্র জঙ্গিপুর মহকুমায়। গত কয়েকদিনের অশান্তিতে জঙ্গিপুর মহকুমায় বিড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত সমস্ত ধর্মের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একদিকে যেমন বিড়ি শ্রমিকরা নিয়মিত কাজ করতে পারেননি, তেমনি বিড়ি শিল্পের মালিকরাও তাঁদের কারখানা খুলতে পারেননি।  তিনি জানান ,'জঙ্গিপুর মহকুমায় বিড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৮০ শতাংশ মানুষই ফরাক্কা, সামশেরগঞ্জ এবং সুতি এলাকার বাসিন্দা। তাই এই শিল্পের উপর আন্দোলনের  প্রভাব এই অঞ্চলগুলোতে সব থেকে বেশি পড়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার জন্য অনেক বিড়ি মালিকরা যেমন সময় মতো জিএসটি জমা করতে পারেননি, তেমনি অনলাইন আর্থিক লেনদেনও দীর্ঘ সময় বন্ধ থেকেছে। ফলে আমাদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।'  ঔরঙ্গাবাদ বিড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলেন, 'গত কয়েকদিন ধরে এই এলাকায় বিড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। তবে প্রশাসনিক কর্তাদের আশ্বাসের পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।' তিনি জানান, 'গত ৪-৫ দিন ধরে বিড়ি তৈরির স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকায় মালিক এবং শ্রমিক পক্ষ মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে আমাদের সকলের। মুর্শিদাবাদ থেকে অসম, ত্রিপুরা, দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, মেঘালয় সহ আরও একাধিক রাজ্যে ট্রাকে করে বিড়ি রপ্তানি হয়। কিন্তু অশান্তির আবহে গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা থাকায় এবং শ্রমিকরা না আসায় কোথাও বিড়ি 'লোড'-এর কাজ হয়নি। তার ফলে জেলা থেকে বিড়ি রপ্তানি গত ৪-৫ দিন ধরে একপ্রকার বন্ধ ছিল।' রহিমা বিবি নামে সুতি-ঔরঙ্গাবাদ এলাকার এক বিড়ি শ্রমিক বলেন, 'মাত্র কয়েক মাস আগে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে ২০২ টাকা হয়েছে। অশান্তির কারণে গত চারদিন ধরে আমরা কেউ বিড়ি তৈরির কাজ করতে পারিনি। আজ থেকে আবার মুন্সিরা আমাদের বিড়ি তৈরির পাতা এবং বিড়ির মশলা দিয়েছেন বিড়ি তৈরির জন্য। অশান্তির কারণে গত ৪-৫ দিন আমাদের কোনও রোজগার হয়নি।'
  • Link to this news (আজকাল)