• খাল কাটলে আসবে রাজস্ব, মানসের প্রকল্পে উৎসাহ
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • বিনামূল্যে কাটা যাবে খাল, উল্টে রাজ্য পাবে রাজস্ব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে এমনই অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করল রাজ্য সেচ দপ্তর। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বহু খাল, ছোট নদী নিয়মিত ড্রেজিং করা হয় না। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের অভাব অন্যতম কারণ। ফলে বন্যার সময় সেই জল উপচে পড়ে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হয়। গোটা উত্তর ভারতের জল বাংলার উপর দিয়েই প্রবাহিত হয়, তাই স্বভাবতই বর্ষাকালে বাংলার বহু জেলা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। রাজ্য সরকরের এই উদ্যোগে, একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা নদীবক্ষ, খাল ইত্যাদি কাটবে। এরপর সেখানকার মাটি নেবে সেই সংস্থা। এর বিনিময়ে রাজ্য সরকার পাবে রাজস্ব।

    এই প্রকল্পে ঠিক কতটা লাভবান হবে রাজ্য? তথ্য-পরিসংখ্যান সামনে এনে রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভূঁইয়া বলেন, ‘মাত্র ২৮টি খালের জন্য আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার তরফ থেকে ১১২ কোটি টাকা রয়‍্যালটি এবং রেভিনিউ পেতে চলেছি। সব ঠিকঠাক চললে রাজ্যকে সেচ দপ্তর থেকে বছরে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা দিতে পারব।’

    এছাড়াও সেচমন্ত্রী জানান, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি এলাকার ১৯ টি খাল সংস্কারের জন্য রাজ্য সেচ দপ্তরের কাছে ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শাসক খুরশিদ আলী কাদরীও প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদীও প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইছামতি এবং তৎসংলগ্ন খাল সংস্কার করার জন্য। ১৬ টা প্রস্তাব এসেছে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়ের থেকে। মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া এই নিয়ে সম্প্রতি রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স বৈঠক করেছেন। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় এই সংস্কারের কাজ করছে ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন। তারা ইতিমধ্যেই অনেক জায়গায় কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই সংস্থার পূর্ব পরিচালক ছিলেন পি. মোহন গান্ধী। স্মরকি মহাপাত্র বর্তমানে এই সংস্থার পরিচালক। তাঁর সঙ্গেও বৈঠক করেন সেচমন্ত্রী। এই প্রকল্পে যেহেতু রাজ্যকে কোনও খরচ করতে হচ্ছে না, বরং মুনাফা মিলছে, তাই এই পদ্ধতিতে সকলেই উৎসাহী। মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত এই ভাবনাকে দ্রুত বাস্তবায়িত করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এই নিয়ে আরও এগিয়ে যেতে পারে রাজ্য।

    মুখ্যমন্ত্রীর এই নয়া চিন্তায় কেবল এই বিপুল অর্থ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে তা নয়, পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের প্রয়োজনও পূরণ হচ্ছে এবং ড্রেজিং-এর কাজও হচ্ছে। এই প্রসঙ্গ তুলেই কেন্দ্রকে আক্রমণ শানিয়ে মন্ত্রী মানস বলেন, ‘কেন্দ্রের উপর আমরা নির্ভরশীল নই কারণ কেন্দ্র বাংলার প্রাপ্য অর্থ দেয় না। মালদহের ভাঙন প্রতিরোধেও আমরা প্রকল্প করছি। ঝড়, বন্যার মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ক্ষয়ের কারণে মানুষের বাসস্থান হারালে কোনও ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় না কেন্দ্রের তরফে। মুখ্যমন্ত্রী এই ভেদাভেদ ভুলে ভূমিক্ষয়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)