সুজয় মুখোপাধ্যায়
গুল্ম থেকে মহীরূহ করেন তো তাঁরাই। খুদেদের সততা ও শিক্ষার পথে পরিচালিত করে মানুষের মতো মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা। একদিকে পড়ুয়াদের পঠনপাঠনে সহায়তা করা অন্যদিকে স্কুল প্রাঙ্গনে সবুজ বাগান তৈরি করেছিলেন বাঁশবেড়িয়ার গেঞ্জেস হাইস্কুলের শিক্ষক সুব্রত গয়লা। ৩ তারিখের পর থেকে স্কুলে যেতে পারেননি সুব্রত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম রায়ের পর স্কুলে ফিরছেন তিনি। ফের পরিচর্যা শুরু খুদেদের। সঙ্গে স্কুলের বাগানেরও।
২০১৯ সালের একুশে জানুয়ারি হুগলির বাঁশবেড়িয়ার গেঞ্জেস হাই স্কুলে ভূগোলের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন সুব্রত গয়লা। স্কুলে যোগ দিয়েই তিনি মনে মনে শপথ নিয়েছিলেন, উপযুক্ত ছাত্র তৈরির। সেই কর্তব্য পালনের সময়ে স্কুল চলাকালীনই একদিন লক্ষ্য করেন বাচ্চাদের স্কুল প্রাঙ্গনে রোদের মধ্যে খাওয়া-দাওয়া করতে।
তার পরেই সিদ্ধান্ত নেন, স্কুল প্রাঙ্গনে গাছ লাগানোর। মিড ডে মিলের রন্ধনশালার ঠিক পাশেই লাগিয়েছেন কৃষ্ণচূড়া-সহ একাধিক গাছ। শুধু তাই নয় বিভিন্ন ফুলের বাগান তৈরি করেছিলেন। চাকরিহারা হওয়ার পর থেকেই স্কুলে যেতে পারেননি। মুষড়ে পড়েছিল পড়ুয়ারা। স্যরের শখের বাগানও পরিচর্যার অভাবে ভোরে উঠেছিল আগাছায়।
বৃহস্পতিবারের নির্দেশের পর কিছুটা স্বস্তিতে সুব্রত। তিনি বলেন, ‘স্কুলে যাব। কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি। তবে আমাদের যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক সংগঠন কী সিদ্ধান্ত নেন, সে দিকেও তাকিয়ে আছি।’ তাঁকে স্কুলে আসতে দেখে নিশ্চয়ই খুশি হবে শুভম, রিয়া, পূর্বা, সুরাজ, মালা-সহ অন্যান্য পড়ুয়ারা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশাল তেওয়ারি বলেন, ‘আমার কাছে সব শিক্ষক সব পড়ুয়াযই সমান। স্কুলে শিক্ষক কম হওয়ায় প্রত্যেক শিক্ষকের উপর চাপ পড়েছে। সুব্রত স্যর স্কুলে বাগান তৈরি করেছিলেন। ছাত্রদেরও খুব ভালোভাবে পড়াতেন। ছুটির দিনেও স্কুলে এসে বাগানের পরিচর্যা করতেন। তিনি চলে যাওয়ার পর এখন আর কেউ পরিচর্যা করে না, কারণ এত বড় স্কুলে শিক্ষক কম। ছাত্রদের পড়াশোনা শেখাতেই সময় চলে যাচ্ছে। আমরাও চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুলে ফিরুক শিক্ষকরা।’ বাঁশবেড়িয়ার গেঞ্জেস হাইস্কুলে ৪১ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৫ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। প্রায় ২৩০০ পড়ুয়া রয়েছে এই স্কুলে। যার ফলে সমস্যায় পড়েছে স্কুল।