পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও মুর্শিদাবাদে বহাল কেন্দ্রীয় বাহিনী, নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের
প্রতিদিন | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
গোবিন্দ রায়: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাক চায় কলকাতা হাই কোর্ট। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে অশান্ত মুর্শিদাবাদে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে মামলা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা। গত শনিবার সেই মামলার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ। পরে মুর্শিদাবাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আরও চারটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয়। বৃহস্পতিবার সেই সমস্ত মামলার প্রেক্ষিতে মুর্শিদাবাদের বর্তমান পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা করে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী বহাল রাখার পক্ষেই মত দিয়েছে আদালত।
একই সঙ্গে, সেখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনও স্কিমের ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা নিয়ে রাজ্যকে সিদ্ধান্ত নিতে বলল আদালত। পাশাপাশি, মুর্শিদাবাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য দু’পক্ষের সমন্বয়ে একটি কমিটি গড়ার কথাও জানিয়েছে আদালত। যাতে থাকবেন কেন্দ্র ও রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি এবং লিগ্যাল এইডের সদস্যরা। আদালতের নির্দেশে এদিন মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট জমা দেয় কেন্দ্র ও রাজ্য।
রাজ্যের বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “নতুন করে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলায় আর কোনও ঘটনা ঘটেনি। সেখানে ৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। সঙ্গে আরপিএফও রুট মার্চ করছে। ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশদের শীর্ষ আধিকারিকরা এলাকা পরিদর্শন করছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।” কল্যান আরও জানান, “৬০টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সমাজমাধ্যমে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে অনেকগুলি অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে। তারা হিংসা ছড়ানোর জন্য ভিডিও ফুটেজ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছিল। ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করা হয়েছে।”
এছাড়াও ৩৮ টি পরিবারকে ঘরে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানান। আরও বলেন, “জঙ্গিপুর থানা এলাকা যথেষ্ট স্পর্শকাতর। ওই এলাকায় দু’দিন ধরে কোনরকম অশান্তির ঘটনা ঘটেনি।” পরিস্থিতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি তাঁর। এদিন এই সংক্রান্ত মামলাগুলির গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে তা খারিজের খারিজের আবেদন জানান তিনি। তাঁর দাবি, “আসলে মামলাকারীরা রাজনৈতিক মদতপুষ্ট, তাই হিন্দুত্ববাদ প্রচারের চেষ্টা করছে। এই রাজ্য ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু এরা ধর্মনিরপেক্ষ নয়।”
রিপোর্ট দিয়ে কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটার জেনারেল অশোক চক্রবর্তী জানান, “আদালতের নির্দেশের পর ১৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করা হয়।” প্রশ্ন তুলে বলেন, বিএসএফ কি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে! যদিও আদালত বললে বিএসএফ মোতায়েন রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলতে হবে বলে তিনি জানান। কেন্দ্রের রিপোর্টে জানানো হয়েছে মুর্শিদাবাদ ছাড়াও আরও জেলার বিভিন্ন অংশে স্পর্শকাতর রয়েছে।
এনআইএ-এর আইনজীবী অরুণ কুমার মাইতি জানান, তাদের তরফ থেকে প্রাথমিক একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া যেতে পারে, তদন্ত হস্তান্তর না করে। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, “সবকিছু আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায় ছাড়ছেন কেন, কেন্দ্র কি আপনাদের কোন নির্দেশ দেয়নি।” যদিও আবেদনকারীদের তরফে বিল্বদল ভট্টাচার্য, প্রিয়াংকা তিব্রেওয়াল, সুদীপ্ত মৈত্রদের দাবি, গত ১৩ এপ্রিল সেখানে বিএসএফ আক্রান্ত হয়। তাদের লক্ষ্য করে বোমা ছোরা হয়।
বিএসএফের ডিআইজি সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার জানিয়েছিলেন সামশেরগঞ্জের তাঁদের কিছু জায়গা বোম মারা হয়। হলফনামায় মিডিয়া রিপোর্টও দেওয়া আছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই এই ঘটনা ঘটে। পুলিশও আক্রন্ত। এনআইএ, ইউএপিএ এ্যাক্ট অনুযায়ী, এনআইএ তদন্ত হওয়া উচিত বলেও মামলায় দাবি করা হয়। আরও দাবি, এই অশান্তি শুধু মুর্শিদাবাদেই সিমাবদ্ধ নেই। মালদায় মোথাবাড়িতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এমনকি আমতলা-সহ কলকাতা থেকে ৪কিমি এর মধ্যেই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলেও মামলায় দাবি করা হয়।