ডাম্পারে জাল নম্বর প্লেট, জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়িতে দেদারে বালি পাচার
বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: ফের সক্রিয় বালি মাফিয়ারা। অভিযোগ, ডাম্পারে জাল নম্বর প্লেট ব্যবহার করে রাতভর পাচার হচ্ছে বালি। কখনও কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিংয়ের বনাঞ্চলের খাদান থেকে অবৈধভাবে বালি ঢুকছে শিলিগুড়িতে, আবার কখনও শিলিগুড়ির গ্রামীণ এলাকা থেকে বালি পাচার হচ্ছে অন্যত্র। এই ঘটনায় পুলিস, বনদপ্তর এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, দপ্তরগুলির উদাসীনতায় এমন পরিস্থিতি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, বালি পাচার ও বেআইনি খাদানের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।
শিলিগুড়ি মহকুমা ও আশপাশ এলাকা দিয়ে মহানন্দা, বালাসন, তিস্তা সহ অসংখ্য নদী প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে সেগুলির জলস্তর অনেকটাই কম। এই অবস্থায় আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে বালি মাফিয়ারা। মিলন মোড়, সমরনগর, সেভক সহ বিভিন্ন এলাকায় নদী থেকে দেদার বালি তোলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির একাংশ মহানন্দা অভায়ারণ্য ও বৈকুণ্ঠপুর ফরেস্ট ডিভিশনের অধীনে। সেখান থেকে বালি বোঝাই ডাম্পার কখনও শিলিগুড়ি শহরে ঢুকছে, আবার কখনও ইসকন মন্দির রোড হয়ে যাচ্ছে ইস্টার্ন বাইপাসে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডাম্পারগুলি নম্বর প্লেটও জাল। সেগুলির একটির নম্বর প্লেট অনলাইনে চেক করে জানা গিয়েছে, সেটি বর্ধমান জেলার একটি বাইকের নম্বর। বনদপ্তর, পুলিস, পরিবহণ দপ্তর এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের উদাসীনতায় বালি মাফিয়ারা এভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে চম্পাসরি এলাকায়। স্থানীয় কাউন্সিলার তথা পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের এমআইসি দিলীপ বর্মন বলেন, রাতভর ডাম্পারের দাপটে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জাল নম্বর প্লেট ব্যবহার করে ডাম্পার চলছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়েছি। পুলিস ও প্রশাসনকে জানানো হবে।
আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তর অবশ্য জানিয়েছে, এমন অভিযোগ তারা পায়নি। খোঁজখবর নেবে বলে তারা জানিয়েছে। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিস কমিশনার (ট্রাফিক) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বালি পাচার রুখতে পুলিস সতর্ক রয়েছে। বনদপ্তরের দার্জিলিং বন্যপ্রাণ ডিভিশনের অধীনে মহানন্দা অভায়ারণ্য। সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিএফও বিশ্বনাথ প্রতাপ বলেন, মহানন্দা অভায়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীতে কোনও খাদান নেই। কিন্তু নদীর কিছুটা নিম্নপ্রবাহ থেকে বালি তোলা হচ্ছে বলে খবর মিলেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য পুলিস ও প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, শিলিগুড়ি মহকুমায় বৈধ খাদানের সংখ্যা ন’টি। যারমধ্যে ফাঁসিদেওয়া ও খড়িবাড়িতে তিনটি করে, মাটিগাড়ায় দু’টি ও নকশালবাড়িতে একটি খাদান আছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতেও মাফিয়ারা সক্রিয় বলে অভিযোগ। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নদীর পাড়ে বালি মজুত করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে খড়িবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া ও নকশালবাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রচুর বালি বাজেয়াপ্ত করেছে ভূমিদপ্তর। দার্জিলিংয়ের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) রাম তামাং বলেন, নদী থেকে বেআইনিভাবে বালি তোলা রুখতে পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চলছে। জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।