• অবসরের পরও তমলুক মেডিক্যালে রোগী দেখেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, ক্লাসও নেন নিয়মিত
    বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: অবসরগ্রহণের পরও তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা এবং ডাক্তারি পড়ুয়াদের ক্লাস করাচ্ছেন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ স্বপনকুমার সামন্ত। ৪৫বছরের কর্মজীবন কাটানোর পরও ৭২বছর বয়সে সম্পূর্ণ বিনা বেতনে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ও পঠনপাঠনে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। শুধু তাই নয়, তমলুক ব্লকের শালিকা-দামোদরপুরে নিজের জন্মস্থানে বিনামূল্যে আঁকার স্কুল গড়েছেন। মায়েদের ছ’মাসের সেলাইয়ের কাজে ট্রেনিং দিয়ে তাঁদের সেলাই মেশিন তুলে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ওই চিকিৎসক। নিজের প্রয়াত বাবার স্মরণে স্কুল গড়ে সেখানে পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে প্রকৃত মানুষগড়ার পাঠদানও চলছে। চক্ষুরোগ নিয়ে সচেতনতায় সারা দেশের নামী চিকিৎসকদের নিয়ে গড়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব কমিউনিটি অপথালমোলজিস্টস অব ইন্ডিয়া(অ্যাকোয়েন) সংগঠন। সেই সংগঠন দেশব্যাপী ‘দৃষ্টি সুরক্ষা যাত্রা’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চোখের চিকিৎসায় নানাভাবে সচেতন করছে।

    তমলুক শহরের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত স্বপনবাবু। বিলেত ফেরত এই চিকিৎসকের বাড়ি তমলুক শহরে আবাসবাড়িতে। ২০১৮সালে ৩১ডিসেম্বর ৬৫বছর বয়সে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে অবসর নেন। তারপর ছত্তিশগড়ে রায়গড় সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চক্ষু বিভাগের প্রধান হন। ২০২৩সালে ৩১ডিসেম্বর সেখান থেকে অবসর নেন। এরপরই স্বপনবাবু নিজের জেলায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘ভলান্টারি সার্ভিস’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো ২০২৪সালের জুন মাস থেকে ওই হাসপাতালে প্রতি মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার তিনি বিনা বেতনে পরিষেবা দেন। এমবিবিএস পড়ুয়াদের ক্লাসও নেন। বছর ৭২-এর স্বপনবাবু নামী চিকিৎসক হিসেবেই পরিচিত। নিজের জেলা এবং এলাকার জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই চক্ষুরোগ নিয়ে ধারাবাহিক সচেতনতা গড়ে তুলছেন। তৈরি করেছেন লিফলেট। তাতে চোখ ভালো রাখার ১১দফা উপায় সহজ সরল বাংলা ভাষায় লিখে দিয়েছেন। রোগীদের হাতেও ওই লিফলেট তুলে দেন। ‘দৃষ্টি সুরক্ষা যাত্রা’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহারাষ্ট্র থেকে রাজস্থান, কাশ্মীর সহ সারা দেশে সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি চোখের রোগ নিয়ে সচেতনতা গড়ছেন।

    নিজের গ্রামের বাড়িতে একটি আঁকার স্কুল গড়েছেন। ১২বছর বয়স পর্যন্ত প্রায় ৭০জন কচিকাঁচা বিনা পয়সায় সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস করে। মায়েদের জন্য ‘ফিমেল এমপাওয়ারমেন্ট সেন্টার’ গড়েছেন। সেখানে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের মেশিন তুলে দেওয়া হবে। এছাড়াও দরখাস্ত লেখা, হিন্দিতে কথা বলা সহ নানাভাবে প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

    স্বপনবাবু বলেন, আমার বাবা নাইকুড়ি ঠাকুরদাস ইনস্টিটিউশনের সহ প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ঠাকুরদা চনশ্বরপুর জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ছোট থেকে গাইড থাকায় আমি একজন চিকিৎসক হতে পেরেছি। কিন্তু, আমার অনেক সহপাঠী মেধা থাকা সত্ত্বেও সঠিক গাইডের অভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি। নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। তখন আমিও তাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। তাই একপ্রকার প্রায়শ্চিত্যের জায়গা থেকেই আমি গ্রামে বিদ্যালয় খুলেছি। সেখানে পুঁথিগত পঠনপাঠনের বাইরে নানা বিষয় শেখানো এবং পারদর্শী করে তোলা হয়। কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সপ্তাহে দু’দিন পরিষেবা দিই। সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই আমার এই সিদ্ধান্ত।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)