নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: নয়াগ্ৰামে ফের হাতির মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল। বৃহস্পতিবার সকালে খড়্গপুর ডিভিশনের পাঁচকাহানিয়া বিটের জঙ্গল লাগোয়া বড়শোলে একটি স্ত্রী হাতির দেহ পাওয়া যায়। বনকর্মীরা ধানজমি থেকে ওই অল্প বয়সের হাতিটির দেহ উদ্ধার করেন। এর আগে নয়াগ্রামের খাসজঙ্গলে ১৫বছরের একটি পুরুষ হাতির দেহ পাওয়া গিয়েছিল। একমাসের মধ্যে পরপর দু’টি হাতির মৃত্যু ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে।
খড়্গপুরের ডিএফও মণীশ যাদব বলেন, বড়শোলে ১২-১৩ বছরের একটি হাতির মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। পরপর দু’টি হাতির মৃত্যু উদ্বেগজনক। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে এই হাতিটির মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
জেলার বন ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আন্দোলনের এক কর্মী অভিযোগ করেন, লোধাশুলি এলাকায় তিনটি হাতি মারা গিয়েছিল। সেই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল। ফসল রক্ষায় বেশকিছু জায়গায় চোরাগোপ্তা বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। সেকারণেই হাতি মারা পড়ছে। বনদপ্তর যে বিষয়টি জানে না এমন নয়। খড়্গপুর বনবিভাগের অধীনে সাঁকরাইল ও নয়াগ্ৰাম ব্লক পড়ে। তিন দশক আগেও হাতির পাল নয়াগ্ৰামের জঙ্গলের পথ ধরে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ হয়ে দলমা পাহাড়ে ফিরে যেত। এছাড়া, নয়াগ্ৰাম ও গোপীবল্লভপুর হয়ে ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড়ে ফেরার আরও একটি করিডর ছিল। এখন ওড়িশার পথ বন্ধ। হাতির পালকে ঝাড়খণ্ডে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে হাতির পাল ঝাড়গ্রামের বিস্তীর্ণ জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারের ফেন্সিং বসানোয় হাতির পুরনো করিডরে বহু পথ বন্ধ। ফলে হাতি খাবারের সন্ধানে বন লাগোয়া জমির ফসল নষ্ট করছে। লোকালয়ে ঢুকে বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। এনিয়ে নয়াগ্ৰামের চাষিরা ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। অনেকসময় তাঁরা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
স্থানীয় চাষি সদানন্দ মুর্মু বলেন, এই এলাকায় ৫০টির বেশি হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাতি তাড়াতে আমরা কৃষিজমিতে কুঁড়েঘর বানিয়ে থাকছি। রাতে হাতির পাল ঢুকলে মশাল জ্বালিয়ে তাড়ানো হয়। বুধবার রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা আসতে পারিনি। সেই সুযোগে হাতির পাল এলাকায় ঢুকে পড়ে। সকালে এসে দু’টি হাতিকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। একটি হাতি জমির উপর মরে পড়েছিল। অপর চাষি দিলীপ সোরেন বলেন, প্রতিদিন হাতির পাল এসে জমির ফসল খেয়ে যাচ্ছে। চাষবাস করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বনদপ্তর হাতি সরানোর বিষয়ে পদক্ষেপ করে না। নয়াগ্ৰাম বনবিভাগের কর্মী দীপক মণ্ডল বলেন, সকালে হাতির মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঁচকাহানিয়া বিটে নিয়ে আসা হয়। পরপর অল্প বয়সের হাতির মৃত্যু কীভাবে হচ্ছে-বোঝা যাচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নিজস্ব চিত্র