সবুজ বিশ্বাস, জঙ্গিপুর: ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে যখন সামশেরগঞ্জ জ্বলছে, তখন আঁচ এসে লেগেছিল রানিপুরে। ধারালো অস্ত্র হাতে একদল উন্মত্ত দুষ্কৃতী ঢুকে পড়ে রানিপুরে। বাড়ি বাড়ি চলে লুট। রানিপুরে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। পরস্পরের প্রতিবেশী, মিলেমিশে থাকেন বহু বছর ধরেই। সেই মুহূর্তে সে কথা বিস্মৃত হননি কেউই। সানাউল, উকিল শেখ, মানিক, বংশীলাল ও স্বপন দাসরা পাশাপাশি থাকেন। একদল দুষ্কৃতী এলাকায় এসে দাপাদাপি শুরু করলে মানিক আতঙ্কে ঘর থেকে চিৎকার করে সানাউল, উকিলদের সাহায্য চান। তাঁরাই এগিয়ে এসে মানিকদের রক্ষা করেন। প্রয়োজন হলে ডাকবেন, প্রাণ চলে গেলেও পাশে থাকব, এই বলে প্রৌঢ় মানিককে অভয় দেন সানাউলরা। শেষ পর্যন্ত হিংসার তাণ্ডব রুখে দেন সানাউলরা। সানাউল, উকিলরা সেই মুহূর্তে শুধুমাত্র হৃদয়ের কথা শুনেছিলেন।
সানাউল শেখ ও তাঁর ভাই উকিল শেখের বাড়ির উল্টোদিকেই মানিক দাসের বাড়ি। বাপ ঠাকুরদার আমল থেকেই পাশাপাশি বাস। গত শনিবার সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে অশান্তির আগুনে যখন পুড়ছে সামশেরগঞ্জ, তার আঁচ এসে পড়ে মানিকের দুয়ারে। কিন্তু সেই আঁচ মানিকের চৌকাঠ পেরতে দেননি সানাউল, উকিলরা। কারণ, হিন্দু-মুসলিম ভেবে তো তাঁরা কখনও একসঙ্গে থাকেননি, তাঁদের পরিচয় তাঁরা প্রতিবেশী। কোনও ভেদাভেদ বা অশান্তি চান না।
তাই আগাগোড়া প্রাণ দিয়ে বন্ধু মানিকের পাশে থেকেছেন সানাউলরা। মানিক দাস বলেন, চারিদিকে ঝামেলা চলছে শুনে ভয়ে ঘরেই ছিলাম। আমার বাড়িতে হামলা করতে এলে ওরা রুখে দাঁড়ায়। সানাউল বলেন, প্রথম বার একদল আসে, তাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠিয়ে দিই। ফের দ্বিতীয় দফায় আরও একদল আসে। তাদের বলি আমরা অশান্তি চাই না। কেন অশান্তি করব! ওদের বাড়ির খাবার আমাদের ঘরে আসে, আমাদের বাড়ির খাবারও ওদের বাড়িতে যায়। উকিল শেখ বলেন, ওদের কোনও অসুবিধা হতে দেব না। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে ওদের রক্ষা করব। আমরা হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, আমরা একসঙ্গে মিলেমিশে শান্তিতে থাকতে চাই।
দিনকয়েক আগে অশান্তির মাঝেই সামশেরগঞ্জের সিংহপাড়ায় দেখা গিয়েছিল সম্প্রীতির নজির। মুসলিম প্রতিবেশীদের বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন হিন্দুরা। আর এবার সঙ্কটের মুহূর্তে হিন্দু বন্ধুর পাশে দাঁড়ালেন মুসলিমরা। নিজস্ব চিত্র