বন্ধ ঘরের ভিতরে খুন বৃদ্ধা, মাথায় আঘাত পেয়ে অসুস্থ স্বামী
বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: বুধবার গভীর রাতে জামালপুরের অবুজহাটিতে বাড়ির মধ্যেই খুন হলেন এক বৃদ্ধা। পুলিস তাঁর স্বামীকেও বাড়ির ভিতর থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেছে। বৃদ্ধ আপাতত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। পুলিস জানিয়েছে, মৃতার নাম মীরা সরকার (৭২)। তাঁর মাথার পিছনে দিকে বাঁশ জাতীয় কোনও কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। বিছানার মধ্যেই তাঁর মৃতদেহ পড়েছিল। মাথার পিছনের দিকের অংশ ফেটে যাওয়ায় বিছানা রক্তে ভিজে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে দীর্ঘক্ষণ ওই বয়স্ক দম্পতি ঘরের দরজা না খোলায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। তাঁরা দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন। বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর ওই বৃদ্ধার স্বামী দরজা খোলেন। স্থানীয়রা বলেন, তাঁর কপালে আঘাত ছিল। তিনি ভয়ে কাঁপছিলেন। ঘরের মধ্যে বৃদ্ধার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকার বাসিন্দারা জামালপুর থানায় খবর দেয়। পুলিস এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতার স্বামী নীলাদ্রি সরকারকে প্রথমে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তিনি দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে পুলিসকে তথ্য দিতে পারেননি। তবে পুলিস বেশকিছু ক্লু পেয়েছে। সেই সূত্র ধরেই তদন্তকারীরা আততায়ীর কাছে পৌঁছতে চাইছে। এসডিপিও অভিষেক মণ্ডল বলেন, খুনের মোটিভ এখনও স্পষ্ট নয়। আততায়ীর খোঁজে তল্লাশি চলছে। মৃতার আত্মীয় স্বপন দত্ত বলেন, ওঁদের কোনও শত্রু ছিল না। বেশি সম্পত্তিও নেই। অল্প কিছু জমি রয়েছে। সুতরাং সম্পত্তির জন্য কেউ খুন করবে না। আমাদের প্রাথমিক অনুমান, মীরা সরকার দুষ্কৃতীকে চিনতে পেরেছিলেন। সেই কারণেই তাকে খুন করা হতে পারে। ওরা ভেবেছিল, ওঁর স্বামী হয়তো মারা গিয়েছেন। তিনি বেঁচে যেতে পারেন বলে তাদের ধারণা ছিল না। পুলিসের দাবি, খুনি একজনই ছিল। স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সময়ে মৃতার স্বামী বাড়িতেই ছিলেন। তিনি কেন দরজা খুলে এলাকার লোকজনদের বিষয়টি জানালেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। বাইরে থেকে দুষ্কৃতী ঢুকলে সেটা কীভাবে সম্ভব তাও তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। স্থানীয়রা বলেন, গভীর রাতে ওই ঘটনা ঘটেছে। বাড়িতে ওই দম্পতি ছাড়া আর কেউ থাকত না। তাদের ছেলেমেয়েও নেই। আগে মৃতার স্বামী একটি দোকান চালাতেন। দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কৃষিকাজ করে তাঁদের সংসার চলত। বৃদ্ধা সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতেন। বৃদ্ধর সঙ্গেও কারও খারাপ সম্পর্ক ছিল না। মৃতদেহ উদ্ধারের পর এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা পুলিস কুকুর এনে ঘটনা তদন্ত দাবি করতে থাকেন। পুলিস দুষ্কৃতীকে দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেয়। এক পুলিস আধিকারিক বলেন, ঘরের মধ্যে বাঁশের টুকরো ছিল। দুষ্কৃতী সেটা দিয়েই সম্ভবত মাথায় আঘাত করে। ঘরের মধ্যেই দুষ্কৃতী কিছু প্রমাণ ছেড়ে গিয়েছে। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই সে গ্রেপ্তার হবে। আততায়ী বৃদ্ধার পরিচিত বলেই প্রাথমিকভাবে পুলিস মনে করছে। বৃদ্ধার মাথা ছাড়া অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই।