• সঙ্ঘের নিষেধ উড়িয়ে আজ বিয়ের পিঁড়িতে প্রচারক দিলীপ, মেনুতে মাছের রকমারি পদ
    বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিয়ে করছেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পাত্রী? দলীয় কর্মী রিঙ্কু মজুমদার। আজ, শুক্রবার দিলীপের রাজারহাটের বাড়িতেই চার হাত এক হবে। হিন্দু রীতি মেনে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে মেদিনীপুরের প্রাক্তন এমপি’র বিয়ের পর্ব সম্পন্ন হবে। পাত্রী রিঙ্কু মজুমদার ফোনে বলেন, ‘আমরা নিজেরা নিজেদের অভিভাবক। নিজেদের সম্মতিতে সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছি।’ দিলীপ ঘোষ বিয়ের কথা স্বীকার করেছেন। জনা চল্লিশেক অতিথিকে নিয়ে ছোট অনুষ্ঠান। থালি কি নিরামিষ? তা কিন্তু নয়। অতিথিদের জন্য আজ মেনুতে মাংস থাকছে না ঠিকই। তবে থাকবে একাধিক মাছ ও সব্জির আইটেম।  

    প্রায় চল্লিশ বছর আগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) ডাকে বাড়ি ছেড়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। বাংলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় বছরের পর বছর সঙ্ঘের বিভিন্ন দায়িত্ব সামলেছেন। জুটেছিল ‘সঙ্ঘ প্রচারক’ তকমা। কিন্তু প্রচারক হওয়ার মূল শর্ত কী? অবিবাহিত থাকা। প্রচারক হয়ে ছাদনাতলায় যে যাওয়া যায় না, তা দিলীপবাবুকে বোঝাতে আসরে নেমেছিলেন সঙ্ঘের শীর্ষ কর্তারাও। তাতে অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। কৌমার্য ভাঙবেনই, পণ করেছিলেন তিনি। সঙ্ঘের বিরাগভাজন হয়েছেন দিলীপ ঘোষ। যদিও ২০১৪ সালে এই সঙ্ঘই তাঁকে বিজেপিতে পাঠায়। সেখান থেকেই তাঁর রাজনৈতিক উত্থান। ২০১৫ সালে বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি। ২০১৬ সালে খড়্গপুর (সদর) কেন্দ্র থেকে বিধায়ক। ২০১৯ সালে মেদিনীপুরের এমপি। ‘গোরুর দুধ থেকে সোনা’ খুঁজে পাওয়ার তথ্য সর্বসমক্ষে এনে কার্যত হাসির খোরাক হয়েছিলেন দিলীপবাবু। তাতেও থামানো যায়নি তাঁকে। কুকথা, মহিলাদের প্রতি অসম্মানজনক কথাবার্তা, অস্ত্র হাতে ধরার নিদানের মতো বিতর্কে বারবার জড়িয়েছেন তিনি। দলবদলুরা পদ্মপার্টিতে ‘অনুপ্রবেশ’ করায় ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পর থেকেই দিলীপবাবুর গ্রাফ নামতে শুরু করে। পার্টিতে একের পর এক পদ খোয়াতে শুরু করেন তিনি। গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁর কেন্দ্রও বদলে দেওয়া হয়। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে হেরে যান দিলীপ। সে নিয়ে দলের একাংশের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছিলেন গোপীবল্লভপুরের ‘নাড়ু’। তখন থেকেই তীব্র হতাশা গ্রাস করতে থাকে দিলীপবাবুকে। হতাশা আর অবসাদের এই সময়েই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে রিঙ্কুদেবীর। তিনি দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার মহিলা মোর্চার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। কয়েক মাস আগে তাঁরা একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।  সূত্রের দাবি, দিলীপ ঘোষের বিয়ে আটকাতে সঙ্ঘ ও বিজেপির শীর্ষ স্তর থেকে লাগাতার চেষ্টা হয়েছে। বর্ধমানে তাঁর সঙ্গে একান্তে দেখা করেছিলেন স্বয়ং সরসঙ্ঘ চালক মোহন ভাগবত। এমনকী প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এক আমলা কয়েকদিন আগে ফোনে তাঁকে বিয়ে না করার পরামর্শ দেন। কারণ, হাজার হাজার বিজেপি কর্মী-সমর্থকের কাছে তাঁর একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। গত কয়েকদিন বহু কর্মী দিলীপের দুয়ারে গিয়ে কান্নাকাটি পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু দিলীপবাবুকে টলানো যায়নি। মা পুষ্পলতা দেবীর আর্জি মেনে আজ গুড ফ্রাই ডে’তে শুভ পরিণয় হচ্ছে তাঁর।
  • Link to this news (বর্তমান)