বাংলাদেশি আজাদের মাধ্যমে জঙ্গিদের স্লিপার সেলের সদস্যদের হাতে পাসপোর্ট, তদন্তে ইডি
বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও সংবাদদাতা, কল্যাণী: বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের স্লিপার সেলের সদস্যদের জাল নথি দিয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছে ইডির হাতে ধৃত বাংলাদেশি আজাদ মল্লিক। সীমান্তের ওপারে থেকেই তারা হাতে পেয়ে গিয়েছে ভারতীয় পাসপোর্ট। পাসপোর্টকাণ্ডে ধৃত আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য উঠে আসার পর উদ্বেগ বেড়েছে তদন্তকারীদের। তার মাধ্যমে পাসপোর্ট সেদেশের কট্টরপন্থীরাও পেয়েছে বলে খবর। সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার চাকদহে দুলাল বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। দুলাল এই চক্রের এজেন্ট হিসেবে কাজ করত বলে জানা যাচ্ছে। আজাদের ফোন থেকে মেলা তথ্যের ভিত্তিতে এই তল্লাশি বলে জানা গিয়েছে। একইসঙ্গে তার এজেন্ট হিসেবে কাজ করা আরও অনেকের নাম মিলেছে বলে খবর।
বিরাটির বিশরপাড়ার বাসিন্দা বাংলাদেশি আজাদ ধরা পড়ার পর কেন্দ্রীয় এজেন্সি জানার চেষ্টা করছিল, শুধুই কি অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের সে পাসপোর্ট করে দিয়েছে, নাকি তার মাধ্যমে জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরাও তা পেয়েছে। আজাদ তদন্তকারীদের জানিয়েছে, কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে আসা বাংলাদেশিদের জন্য প্রথমে সে আধার ও ভোটার কার্ড তৈরি করে দিত। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে সীমান্তের ওপারের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের মাথারা। তাদের কথামতো মোটা টাকার বিনিময়ে জঙ্গি গোষ্ঠীর একাধিক সদস্যকে সীমান্ত পার করানোর কাজ শুরু করে। এরাজ্যে নিয়ে এসে তাদের আধার-ভোটার কার্ড তৈরি ও থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। ঠিকানা দেখানো হয় উত্তর ২৪ পরগনা. নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের। এমনকী বার্থ সার্টিফেকেট পর্যন্ত করে দেয়। এই নথির ভিত্তিতে জঙ্গিদের স্লিপার সেলের সদস্যদের ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি হয়ে যায়। তদন্তকারীদের কাছে আজাদ জানিয়েছে, বাংলাদেশে থাকাকালীন হাসিনা বিরোধী বলে পরিচিত কট্টরপন্থী বিভিন্ন নেতার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তদানীন্তন হাসিনা সরকার ধরপাকড় শুরু করলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এই কট্টরপন্থী নেতারা। তাদের নিরাপদে সীমান্ত পেরিয়ে এই রাজ্যে নিয়ে আসার পর সমস্ত ভারতীয় নথি ও পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়। যারা এখনও এই রাজ্যে লুকিয়ে রয়েছে বলে খবর ইডির কাছে।
একইসঙ্গে আজাদের মানি এক্সচেঞ্জারের অফিসও ইডির স্ক্যানারে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, এই অফিসে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ আসত। এগুলি বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা পাঠাত ভারতে চলা তাদের সংগঠনের জন্য। ভারতীয় টাকায় রূপান্তর করে আজাদ এখানকার স্লিপার সেলের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দিত বলে জানা যাচ্ছে। এভাবে কত টাকা তার মাধ্যমে পাচার হয়েছে, তার হিসেব কষার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। এমনকী বেআইনি সোনা পাচারে যুক্ত ব্যবসায়ীদের টাকা তার মানি এক্সচেঞ্জারের অফিস থেকে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে ইডি জেনেছে। এই নিয়ে খোঁজখবর চলছে।