• লাদেনের সন্ধান দেওয়া গোয়েন্দা-কুকুরের মতো বুদ্ধিমান ও ক্ষিপ্র, পুলিসে চাকরি পেল ‘কায়রো’
    বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • স্বার্ণিক দাস, কলকাতা; দেড় দশকেরও বেশি আগের কথা। ২০১১ সালের ২ মে। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে সেদিন ঘটেছিল মার্কিন আর্মির ‘নেপচুন স্পিয়ার’ অপারেশন। গুলির লড়াইয়ে খতম করা হয়েছিল ওসামা বিন লাদেনকে। কিন্তু কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী কোথায় লুকিয়ে আছে, সেই সন্ধান দিল কে? ‘নেপচুন স্পিয়ার’ অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত আর্মি অফিসারদের শুধুমাত্র একটি নাম সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রকাশে সম্মতি দিয়েছিল আমেরিকা। নামটি হল ‘কায়রো’। রক্তমাংসের চারপেয়ে গোয়েন্দা! আদতে বেলজিয়ান মেলিনয় প্রজাতিভুক্ত একটি কুকুর। তীব্র ঘ্রাণশক্তি, ক্ষিপ্রতা ও ক্ষুরধার বুদ্ধিতে যার জুড়ি মেলা ভার। সেই কায়রোকে অনুসরণ করেই লাদেনের ডেরায় পৌঁছে যায় মার্কিন সেনাবাহিনী।

     প্রজাতি ভিন্ন হলেও সেই একই ক্ষিপ্রতা, ঘ্রাণশক্তি ও বুদ্ধিমত্তায় কায়োরাকে জোর টক্কর দিতে পারে এক খুদে ল্যাব্রাডর। বলা ভালো হবু গোয়েন্দা! রাজ্য পুলিসের ডগ স্কোয়াডে সদ্য ‘চাকরি’ পেয়েছে সেরকমই এক দেড়মাসের ল্যাব্রাডর। গায়ের রং জেট ব্ল্যাক। সম্প্রতি ১০টি ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুর কিনেছে পুলিস। প্রতিটির দাম ১২-১৫ হাজার টাকা। তার মধ্যে ন’টির রং সাদা। গায়ের রং ও চতুর বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে একেবারেই ব্যতিক্রমী কালো ল্যাব্রাডরটি। মার্কিন সেনার কায়রোর কীর্তি বইয়ের পাতা থেকে ইন্টারনেটে সহজলভ্য। সেই বৈশিষ্ট্যই কালো রঙের খুদে ল্যাব্রাডরের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন রাজ্য পুলিসের শীর্ষকর্তারা। ভবানী ভবন সূত্রে দাবি, এই কারণে খুদে ওই গোয়েন্দা কুকুরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কায়রো।’ 

    লাদেন-খতমের সেই অভিযানে গুরুতর জখম হয়েছিল বেলিজিয়ান মেলিনয় প্রজাতির কায়রো। ২০১৩ সালে ‘চাকরি’ থেকে অবসর নেয় গোয়েন্দা সারমেয়টি। ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল মৃত্যু হয়। বলা যেতে পারে, ঠিক ১০ বছর পর বাংলায় ‘পুনর্জন্ম’ হল কায়রোর। সম্প্রতি বারাকপুর পুলিস অ্যাকাডেমিতে ১০টি ল্যাব্রাডর শাবকের নামকরণ হল ঘটা করে। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিসের ডিজি রাজীব কুমার। সূত্রের খবর, ‘কায়রো’ নামটি তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। এখন তাদের প্রশিক্ষণ-পর্ব চলছে। বাদবাকি ল্যাব্রাডর শাবকের নামেও রয়েছে চমক। বিশ্বের নামজাদা সব চারপেয়ে গোয়েন্দাদের নামে দেওয়া হয়েছে তাদের নাম।

    যেমন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বুলেটবিদ্ধ হয়েও লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল ‘চিপস’। ৬ জনকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিল মার্কিন সেনার এই জার্মান শেফার্ড প্রজাতির এই সারমেয়টি। সেই নামও দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিসের এক হবু গোয়েন্দাকে। মার্কিন মেরিন কর্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল ‘লুকা’। তাকে বলা হতো ‘বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ’। অন্তত ৪০০ বার অত্যন্ত সঙ্কটের সময়ে মার্কিন সেনাকে রক্ষা করেছে জার্মান শেফার্ড ও বেলজিয়ান মেলিনয় প্রজাতির ‘মিক্সড ব্রিড’ এই ‘লুকা’। ইরাক ও আফগানিস্তানের রণাঙ্গনেও সে দুর্দান্ত কাজ করে। এবার সেই নামই দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিসের ‘চাকুরে’ এক সারমেয়কে। পুলিস জানিয়েছে, ‘হবু গোয়েন্দারা’ এখন নেহাতই দুগ্ধপোষ্য। অনেক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষ হলেই তদন্তের ময়দানে কেরামতি দেখাবে ‘কায়রো’, ‘চিপস’, ‘লুকা’রা।
  • Link to this news (বর্তমান)