• মুর্শিদাবাদে বাবা-ছেলে খুনে গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • মুর্শিদাবাদে বাবা–ছেলেকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় এর আগে আরও দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বুধবার রাতে সুতি থেকে ইনজামাম উল হক নামের এক জনকে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। ফলে এই ঘটনায় মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন। অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদে অশান্তির আবহে ফের একবার শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সব ধর্মের মানুষের কাছে শান্তিতে থাকার আর্জি জানিয়েছেন। পাশাপাশি আইনের উপরে ভরসা রাখতে বলেছেন।

    বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য পুলিশের এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলায় ৭০ শতাংশ দোকান খুলে গিয়েছে। অশান্তির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৭৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট ৬০টি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘরছাড়াদের মধ্যে ৮৫ জন ইতিমধ্যেই বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে জেলা প্রশাসন। বাকিদের ফিরিয়ে আনার জন্যও সব রকমভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। এলাকায় রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে। কারও কোনও সমস্যা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রতিম। বর্তমানে সামশেরগঞ্জ এলাকার পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় বাজারহাট খুলেছে। সামগ্রিকভাবে ৭০ শতাংশ দোকান খুলে গিয়েছে।

    সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আবহে গত শুক্রবার মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, সুতি, সামশেরগঞ্জের বেশ কিছু এলাকায় অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। সেই অশান্তির কারণে তিন জন নিহত হয়েছেন। অশান্তির ঘটনার তদন্তে ১১ সদস্যের সিট গঠন করে রাজ্য পুলিশ। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ডিআইজি মুর্শিদাবাদ ওয়াকার রেজা। দলে রয়েছেন জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায়, সুতি, সামশেরগঞ্জ ও ফরাক্কার ওসিরা। পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিস সুপার, ডেপুটি সুপার ও সিআই পদমর্যাদার কয়েকজন অফিসারও আছেন। এই দলের প্রথম বৈঠক ইতিমধ্যেই সংগঠিত হয়ে গিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার।

    মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে মৃতের মধ্যে ছিলেন এক বাবা ও তাঁর ছেলে। তাঁদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এরপর তদন্তে নেমে গত সোমবার বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ থেকে কালু ও দিলাবর নাদাব নামে দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার রাতে ইনজামাম উল হক নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি জাফরাবাদের পাশের গ্রাম শুলিপাড়ার বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, কুপিয়ে খুনের সময় ইনজামাম মাস্ক পরে ছিলেন।

    সিটের প্রথম বৈঠকে উঠে এসেছে, শুক্রবারের জমায়েত থেকে কীভাবে তিনটি এলাকায় দ্রুত হিংসা ছড়িয়ে পড়ল। এর পিছনে গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল কি না সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। পাশাপাশি তদন্তপ্রক্রিয়া কীভাবে চলবে, চক্রান্তকারীদের কীভাবে চিহ্নিত করা হবে সেই বিষয়েও কথা হয়েছে। ধৃত নাবালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মূল চক্রান্তকারীদের নাগাল পেতে চাইছেন সিটের সদস্যরা। এই হিংসা পূর্ব পরিকল্পিত কি না তা নিয়েও তদন্ত চালাবে সিট।

    মুর্শিদাবাদের ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি উঠেছে। এই আবহে দ্রুত তদন্তপ্রক্রিয়া এগোনোর বিষয়ে জোর দিয়েছে সিট। বৈঠকের পর জঙ্গিপুর জেলা পুলিশের সুপার জানিয়েছেন, বৈঠকে কয়েকটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)