• সাময়িক স্বস্তি নয়, স্থায়ী সমাধান চাইছেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকরা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • বৃহস্পতিবার চাকরিহারাদের সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আপাতত আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যোগ্য শিক্ষকরা চাকরি করতে পারবেন। কিন্তু, আপাত দৃষ্টিতে যোগ্য বলে যাঁরা বিবেচিত হয়েছেন, তাঁরা শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের পরেও আন্দোলনে অনড় রয়েছেন। তাঁরা বলছেন, কয়েক মাসের জন্য নয়, তাঁরা ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করতে চান। তাঁরা চাইছেন এই সমস্যার একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। সেজন্য তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাইছেন। আন্দোলনরত ওই শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, তাঁরা যাতে পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত (৬০ বছর বয়স অবধি) যথাযোগ্য সম্মানের সঙ্গে চাকরি করতে পারেন, তার একটি ব্যবস্থা করা হোক। সেই উদ্দেশ্যে তাঁদের পরবর্তী আন্দোলনের অভিমুখ নির্ধারন করা হবে। যদিও এবিষয়ে যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকদের ওই অংশ এখনও সর্বসম্মতভাবে কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি। তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।

    জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চের নির্দেশের সময় আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংগঠন ‘যোগ‍্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল শীর্ষ আদালতের চত্বরেই ছিলেন। তিনি আবার রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বিকাশ ভবনে বৈঠকের সময়েও ছিলেন। তাঁর কথা অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ একটি কৌশলগত সাফল্য তো বটেই। তাঁরা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। বেতনটা পাবেন। এটি প্রাথমিকভাবে কিছু দিনের জন্য তাঁদের স্বস্তি দিয়েছে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেতন পাবেন বা চাকরি থাকবে, এটা তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা চান অবসর গ্রহণের সময় পর্যন্ত চাকরি করতে। সেজন্য তাঁরা রিভিউয়ের জন্য আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

    এদিকে দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরছেন আন্দোলনরত শিক্ষকদের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুল্লা আল মঞ্জুম। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন বন্ধ হবে না। তাঁরা কোনও মতেই পরীক্ষা দেবেন না। তবে রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনও সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার কী তথ্য-প্রমাণ দেবে, সেটি রাজ্য সরকারকেই ভাবতে হবে।

    তিনি আরও বলেন, বেতন বন্ধ হলে তাঁদের আন্দোলন করতে কিছুটা হলেও সমস্যা হত। সে ক্ষেত্রে তাঁদের কিছুটা সুবিধা হল। কিন্তু এটি তাঁদের দাবি নয়। লক্ষ্যও নয়। এমন নয় যে, ছ’মাসের জন্য সাময়িকভাবে তাঁরা স্কুলে গেলেন। তাঁরা সসম্মানে পুরনো চাকরি ফেরৎ পেতে চান।

    প্রসঙ্গত ২০১৬ সালের এসএসসি-র গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল বাতিল করে দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। পরে সেই মামলাটিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিও রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায়কে বহাল রেখেছে। যার জেরে আন্দোলন শুরু হয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে। ২৫ হাজার ৭৫২ জন চাকরিহারার প্রায় সকলেই চাকরির দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। এসএসসি অফিসে বিক্ষোভ থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় ডিআই অফিসে ধর্না দেওয়ার সময় তুলকালাম কান্ড ঘটে। আন্দোলন বন্ধ করতে অনেক জায়গায় চাকরিহারা শিক্ষকদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে।

    সবচেয়ে নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে কসবা ডিআই অফিসের সামনে। এখানে আন্দোলনরত শিক্ষক অমিত ভুঁইয়ার পেটে লাথি মারেন কলকাতা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর রিটন দাস। যা নিয়ে রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি সাময়িক স্বস্তি পেলেও তাঁর বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সাময়িক স্বস্তি মিললেও কোনও স্থায়ী সমাধান মেলেনি। স্থায়ী সমাধান না-পাওয়া পর্যন্ত তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। তিনি দাবি করেন, তাঁদের চাকরি ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিলের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে।

    এদিকে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধরনায় অংশ নিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের একটি স্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা শিল্পা বসু। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শিল্পা এবং ও তাঁর স্বামী দেবরাজ পাল দুজনেই চাকরি হারিয়েছেন। নবদ্বীপের ভালুকা স্কুলের শিক্ষক দেবরাজ পাল। বাড়িতে তাঁদের ছ’বছরের একটি সন্তানও রয়েছে। বাড়িতে ছোট সন্তানকে দেখভালের জন্য রয়ে গিয়েছেন শিল্পার স্বামী দেবরাজ। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের রায়ে ক্ষতে সাময়িক প্রলেপ পড়েছে। কিন্তু পুরোপুরি সুরাহা মেলেনি। ফলে ৩১ ডিসেম্বরের পরে তাঁদের সংসার কী করে চলবে, তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় ওই পরিবার। শিল্পা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাঁরা সাময়িক স্বস্তি পেলেও স্থায়ী সমাধান পাননি। স্থায়ী সুরাহা না মেলা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে আইনি পরামর্শও নেবেন বলে জানিয়েছেন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)