• হাওড়া স্টেশনে, বিমানবন্দরে বহু ক্যাবেই পার্কিং ফি দু’বার! ঠকছেন যাত্রীরা
    এই সময় | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: ভারী লাগেজ নিয়ে দূরপাল্লার ট্রেন থেকে হাওড়ায় নামার পর বাড়ি পৌঁছনোর জন্য অনলাইনে ক্যাব বুক করেছিলেন গড়িয়ার শুভ্র চৌধুরী। বুক করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চালকের ফোন। কোন পার্কিং লটে রয়েছেন, সেটা জানিয়ে দিলেন তিনি। গাড়ির কাছে পৌঁছতে শুভ্রর সমস্যা হয়নি। গাড়ি যখন পার্কিং লট থেকে বেরোচ্ছে, সেই সময়ে এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে চালককে ধরিয়ে দিলেন পার্কিং ফি–র রসিদ। সেটা চালক বাড়িয়ে দেন শুভ্রর দিকেই।

    পার্কিং ফি দেওয়ার কথা যাত্রীর। বাড়ি পৌঁছে ক্যাবের ভাড়া যাত্রী মিটিয়ে দেন। বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়িতে বসে মোবাইল ফোন ঘাঁটার সময়ে ক্যাবের বিলটার দিকে নজর গেল শুভ্রর। সার্ভিস প্রোভাইডারের তরফে পাঠানো বিল। শুভ্র বলছেন, ‘নিছক কৌতূহলবশত বিলটা খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে নজরে পড়ল, সেখানে পার্কিং ফি–র টাকাটা ধরেই নেওয়া আছে। এটা চালকের অজানা নয়। তবু তিনি আলাদা করে আমার কাছ থেকে ৭১ টাকা আদায় করলেন পার্কিং ফি হিসেবে। সেই টাকা পার্কিং লটের স্টাফ–ই পেলেন। তবে ভাড়ার সঙ্গে যেটা আমি দিলাম, সেটা চালকের পকেটে ঢুকল।’

    শুধু রেল স্টেশনে নয়, অনলাইন ক্যাব চালকরা এই কায়দায় কলকাতা বিমানবন্দরের যাত্রীদের কাছ থেকেও ‘ডাবল পার্কিং ফি’ আদায় করছেন বলে যাত্রীদের নিয়মিত অভিযোগ। সতর্ক যাত্রীরা পার্কিং লট থেকে বেরনোর সময়ে পার্কিং ফি–র রসিদ দেখে আলাদা করে ফি দিতে অস্বীকার করলে চালকের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটির উদাহরণও যথেষ্ট রয়েছে। ভুক্তভোগী এক যাত্রী মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, তিনি সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগও করেছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে, সেটা আর জানেন না।

    অ্যাপ ক্যাব চালকদের সংগঠন ‘অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’–এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় ‘এই সময়’–কে বলেন, ‘মূলত হাওড়া স্টেশন এবং বিমানবন্দর থেকে এই ধরনের অভিযোগ আসে। যে চালকরা এ ভাবে ডাবল পার্কিং ফি আদায় করছেন, তাঁরা জেনেবুঝেই করছেন। এটা পুরোপুরি বেআইনি এবং যাত্রীদের ঠকানো।’

    ২০২০ সালে করোনাকাল শুরু হওয়ার আগে অ্যাপ ক্যাব সার্ভিস প্রোভাইডাররা চালকদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ এবং যথাযথ আচরণের ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করত। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে এমন ক্লাস নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ। অথচ এই পাঁচ বছরে বহু নতুন চালক অ্যাপ ক্যাব চালাতে এসেছেন। যাত্রীদের সঙ্গে আচরণের ন্যূনতম শিক্ষা টুকুও সার্ভিস প্রোভাইডারের তরফে তাঁদের দেওয়া হয়নি বলে সূত্রের খবর।

    অ্যাপ ক্যাব চালকদের সংগঠনের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, শহরে সার্ভিস প্রোভাইডারদের কোনও অফিস নেই। রাজ্য পরিবহণ দপ্তরের পক্ষ থেকে বহু বার তাদের অফিস তৈরির নির্দেশ দেওয়া হলেও সেই নির্দেশকে পাত্তা দেওয়া হয়নি।

    যে কারণে গত কয়েক বছর ধরে অ্যাপ ক্যাব পরিষেবার বিরুদ্ধে যাত্রীদের অভিযোগ ক্রমশ বেড়েছে। চালকদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য, অ্যাপে ক্যাব বুক করার পর বিল ডিটেলস–এ যদি দেখা যায়, পার্কিং ফি ধরা রয়েছে, তা হলে পার্কিং ফি–র রসিদ দেখে ফি দেওয়ার প্রশ্নই নেই।

  • Link to this news (এই সময়)