বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
টিপসই চলবে না। প্রত্যেককেই নাম লিখতে হবে। না জানা থাকলে শিখতে হবে। এমনই ফরমান জারি করেছিলেন আসানসোল সংশোধনাগারের সুপার চান্দ্রেয়ী হাইত। এই ঘোষণার পরেই জেলের পুরুষ ও মহিলা বন্দিদের অক্ষরের সঙ্গে পরিচয় করানোর কাজ শুরু করেন তিনি।
গত সরস্বতী পুজোর দিনে ঘটা করে হাতেখড়ি দিয়ে শুরু হয়েছিল সেই প্রশিক্ষণ। তাতে সুপার ছাড়াও জেলের অন্য আধিকারিকরাও অংশ নিয়েছিলেন। এই ক’মাসের চেষ্টায় এখন ৩৫ জন বন্দি নিজেদের নাম সই করতে শিখেছেন। এখন পড়ার নেশা চেপে বসেছে তাঁদের। আরও পড়তে চান বন্দিরা।
আসানসোল সংশোধনাগারে সুপার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই বন্দিদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন চান্দ্রেয়ী। তিনি দেখেছিলেন, এখানে প্রায় পাঁচশো বন্দির মধ্যে মহিলার সংখ্যা ৩৫। এর মধ্যে পুরুষ এবং মহিলাদের অনেকেই বাংলা, হিন্দি বা কোনও ভাষাতেই নিজের নাম লিখতে পারেন না। সবাই টিপছাপ দেন।
ওই বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে আগ্রহী ৬০ জনকে চিহ্নিত করেন কারা কর্তৃপক্ষ। সরস্বতী পুজার দিনে তাঁদের হাতেখড়ি দেওয়া হয়েছিল। অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল ওই বন্দিদের। সেদিন থেকে ৩০ জন মহিলা সমেত ওই ৬০ জনকে তাঁদের নাম বাংলা ও হিন্দিতে লেখানোর কাজ শুরু হয়। সুপারের নেতৃত্বে জেলকর্মীরা নেমে পড়েন এই কাজে।
দিন কয়েক আগে ওই ৬০ জনের পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রত্যেককে কাগজ–কলম দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজের নাম লিখতে বলা হয়। পরীক্ষা শেষে দেখা যায় তাতে ৩৫ জন পাশ করেছেন। কৃতকার্যদের নামের তালিকা টাঙিয়েও দেওয়া হয় জেলের বোর্ডে। কার কার নাম প্রকাশিত হলো, কারা পাশ করেছেন তা দেখার জন্য বন্দিদের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ ছিল বলে জানান জেল সুপার।
‘এই সময়’কে তিনি বলেন, ‘যাঁরা পাশ করেনি তাদের নিয়মিত ভাবে ক্লাস করাবে সফল বন্দিরা। কৃতকার্য বন্দিরা এখন দাবি করেছেন, ইংরেজিতে ওদের এবিসিডি পড়ানো হোক। একইসঙ্গে সহজপাঠের মতো বই পড়তে চাইছে ওরা। সেটাও খুব তাড়াতাড়ি শুরু করা হবে।’ অকৃতকার্য ২৫ জন স্বাক্ষর হলেই পঠনপাঠনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হবে বলে জানান সুপার। তিনি বলেন, ‘এদের মধ্যে অনেকেই খুব বড় ধরনের অপরাধে জড়িত। কয়েকজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়েছে।’
জেল সুপার জানান, এখানে আসার পরে তিনি দেখেছিলেন, জেলে কয়েকজন শিক্ষিত বন্দি রয়েছেন, যাঁরা লাইব্রেরি থেকে বই এনে পড়তে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা উচ্চতম আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের পছন্দ মতো বই এনে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছি। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলগীতির নিয়মিত তালিম হয় এখানে। এখন পঁচিশে বৈশাখের অনুষ্ঠানের জন্য নিয়মিত এক ঘণ্টা করে রিহার্সাল চলছে।’
এমন অনুষ্ঠান সংশোধনাগারে প্রথম জানিয়ে সুপার বলেন, ‘সংশোধনাগরে থাকা বন্দিদের সঙ্গে নিয়ে খুব ভালো কাজ করতে চাই। এই ক’মাসে বুঝেছি, ধীরে ধীরে অনেককেরই মানসিক পরিবর্তন ঘটছে। ওঁদের উৎসাহ দেখে নিজেও তৃপ্তি পাচ্ছি।’