সংঘের প্রচারক কি সংসার করতে পারেন? দিলীপের বিয়েতে প্রশ্ন দলেও
প্রতিদিন | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
সুদীপ রায়চৌধুরী: এমনিতে তিনি রাফ অ্যান্ড টাফ! বরাবর পছন্দ করেন ‘বোল্ড’ সিদ্ধান্ত নিতে। তবে এবার দিলীপ ঘোষ যে ‘ব্যক্তিগত’ সিদ্ধান্তটা নিলেন সেটা যে শুধুই তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলবে তাই নয়, একই সঙ্গে দিলীপ ঘোষের এবং গোটা বাংলার রাজনীতিতেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। ষাট পেরোনো দিলীপের বিয়ে করার সিদ্ধান্ত তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের জন্যও ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। এবং আগামী দিনে রাজনৈতিকভাবে বড়সড় ধাক্কাও খেতে হতে পারে দিলীপকে।
দিলীপ ঘোষের বঙ্গ রাজনীতির আঙিনায় পদার্পণ হয়েছিল আরএসএসের প্রচারক হিসাবে। সংসার নেই, পিছুটান নেই, ২৪ ঘণ্টার রাজনীতিক এবং সমাজসেবক, সেটাই ছিল দিলীপের রাজনৈতিক ইউএসপি। বিয়ে করলে সেই ইউএসপির অনেকটাই হারাবেন দিলীপ, সেই আশঙ্কা তাঁর দলেও অন্দরেও রয়েছে। বস্তুত দিলীপের বিয়ের খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরে। দলের কেউ কেউ বলছেন, হতে পারে বিয়ে করাটা দিলীপ ঘোষের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু পরিচিত রাজনীতিকদের ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যাই করুন না কেন, ভেবেচিন্তে করতে হয়। শোনা যাচ্ছে, দলের তরফে তাঁকে বারণও করা হয়েছিল। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বাঁধা দেওয়া হয়েছিল। দলের অনেকেই চাইছিলেন না, দিলীপবাবু এই বয়সে এসে আর সংসারধর্মে প্রবেশ করুন। এতে রাজনৈতিকভাবে তাঁর ক্ষতি হতে পারে, সেই সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছিল। দলের একাংশের যুক্তি ছিল, এই বয়সে এসে বিয়ে করলে দিলীপ নিজের রাজনৈতিক পুঁজি তো হারাবেনই, সেই সঙ্গে নানা কটুক্তি, হাস্যকর মন্তব্য, শ্লেষ এসবও হজম করতে হবে।
তবে দিলীপের বিয়েতে বিজেপির থেকেও বেশি আপত্তি এসেছিল সংঘ থেকে। দিলীপ একবার বিধায়ক, একবার সাংসদ এবং দলের রাজ্য সভাপতি হলেও তাঁর মূল পরিচয়, তিনি সংঘের প্রচারক। সেই পরিচয়ই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপত্তির মূল ভিত্তি। আরএসএসের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও সংঘ প্রচারক সংসার করতে পারেন না। দিলীপ বিয়ে করার অর্থ সংঘের প্রচারক পদ তাঁকে ছাড়তে হবে। বস্তুত সংঘের সংস্রব ছাড়তে হবে। সেটা হলে আগামী দিনে বিজেপির বড় সাংঠনিক কোনও দায়িত্ব পাওয়াটা তাঁর জন্য বেশ কঠিন হয়ে যাবে। বিশেষ করে রাজ্য সভাপতি হওয়ার দৌড়ে তিনি রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছিল, সেই দৌড়েও সম্ভবত পিছিয়ে পড়বেন দিলীপবাবু। সেই বার্তা আরএসএসের তরফে তাঁকে পাঠানোও হয়েছিল। বারবার বোঝানো হয়েছিল, এই সিদ্ধান্ত নিলে শুধু তাঁর নয়, দলেরও ভাবমূর্তিতে আঁচ আসবে।
কিন্তু দিলীপকে নিরস্ত করা যায়নি। তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, মায়ের জন্য তাঁর এই সিদ্ধান্ত। সেটা বদলাবে না। মায়ের জন্যই হোক, আর প্রেমের টানেই হোক, বিয়ে করলে রাজনৈতিকভাবে বেশ ভালোরকম চাপে পড়তে হবে, সেটা দিলীপবাবু নিজেও জানেন। কিন্তু ওই যে, বরাবরই তিনি ‘বোল্ড’ সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করেন। এবারও তেমনটাই করলেন। যদিও দিলীপ সমর্থকদের বক্তব্য, তিনি জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর সংঘের ওই ‘কঠিন’ নিয়মের আওতায় সেভাবে আসেন না। ফলে বিয়ে করতে তাঁর বিশেষ বাধা থাকার কথা নয়।