সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড় থানার পিংবনি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষাকর্মীর। বৃহস্পতিবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। যদিও সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রার্থীদের। এর পরেই ফুঁসে উঠেছেন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের একাংশ।
পিংবনি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী সুদীপ্তচন্দ্র বিশ্বাস দাবি করেছেন ‘টেন্ডেড’ তালিকায় তাঁর নাম নেই। স্কুলের একমাত্র ক্লার্ক অর্থাৎ গ্রুপ সি কর্মী তিনি। বছর ৩৫-এর এই যুবক ‘এই সময় অনলাইন’-এ বলেন, ‘আমরাও যোগ্য। আমাদেরও তো পরিবার আছে। তাহলে এক যাত্রায় পৃথক ফল হলো কেন? শিক্ষাকর্মী ছাড়া স্কুলগুলি চলবে তো?’
আদালতের রায় অনুযায়ী, পিংবনি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষাকর্মীই আর স্কুলে যেতে পারবেন না। এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৩০০। আপাতত স্কুল শিক্ষাকর্মী-শূন্য হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রলয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘২২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৩ জন শিক্ষাকর্মী ছিলেন। শীর্ষ আদালতের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন ৬ জন শিক্ষক ও ৩ জন শিক্ষাকর্মীই। বৃহস্পতিবারের বিশেষ নির্দেশে শিক্ষক-শিক্ষিকারা হয়তো সোমবার (২১ এপ্রিল) থেকেই স্কুলে ফিরবেন। তবে, শিক্ষাকর্মীরা আর ফিরতে পারবেন না। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাতে একজন ক্লার্ক ছাড়া স্কুল চালানো প্রায় অসম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করানো, মার্কশিট তৈরি থেকে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, মেধাশ্রী, সবুজসাথী থেকে বিভিন্ন ধরনের সরকারি প্রকল্পে ছাত্রছাত্রীদের নাম সঠিকভাবে নথিভুক্ত করা, শিক্ষকদের বেতন, পি এফ-সহ সমস্তকিছুর হিসাব রাখা, স্কুলের অডিট, সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি কাজ করতে হয় একজন ক্লার্ককে। কোনও শিক্ষককে এই দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি ক্লাস করতে পারবেন না। এই বিষয়টি নিয়ে আদালত ও সরকারের ভাবা উচিত।’
পিংবনি উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লার্ক (গ্রুপ-ডি) সুদীপ্তচন্দ্র বিশ্বাসের বাড়ি নদিয়ার রানাঘাটে। চাকরিসূত্রে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। ৩ এপ্রিল সুপ্রিম রায়ের পরই বাড়িটি ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। ফিরে গিয়েছেন নদিয়াতে। বাড়িতে মা ছাড়াও স্ত্রী ও শিশুকন্যা রয়েছেন। কী ভাবে সংসার চালাবেন, এই চিন্তায় মাথার উপরে আকাশ ভেঙে পড়েছে তাঁর।
আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ২০১৭ সালে এই চাকরিটা পেয়েছিলাম। তারপর বিয়ে-থা করে সংসার করেছি। নট-টেন্টেড না হয়েও তো আমার চাকরিটা চলে গেল! সুবিচার পেলাম না।’ তিনি বলেন, ‘যাঁরা যোগ্য শিক্ষাকর্মী, তাঁদের বিষয়েও সরকার ও আদালতকে ভাবতে হবে। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। আমাদের জন্যও কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।’