• লেপার্ডের সঙ্গে লড়াই করে পোষ্যকে বাঁচালেন দীপশিখা
    এই সময় | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার

    মধ্যপ্রদেশের বাদিঝিরিয়া গ্রামের কিরণ, চিতাবাঘের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচিয়েছিলেন নিজের সন্তানকে। বাইগা উপজাতির ওই মহিলা বছর চার আগে এক রাতে তিন সন্তানকে নিয়ে কুঁড়েঘরের বাইরে আগুন পোহাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটা চিতাবাঘ তাঁর তিন বছরের ছেলে রাহুলকে তুলে নিয়ে যায় জঙ্গলে। কিরণ হাল ছাড়েননি। লাঠি নিয়ে তাড়া করে তিনিও ঢুকে যান জঙ্গলে। নিজের প্রাণের পরোয়া না-করে চিতাবাঘকে পিটিয়ে উদ্ধার করেন সন্তানকে। তাঁর কাহিনি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

    আলিপুরদুয়ারের তোপসিখাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাটকাপাড়ার দীপশিখা সমাদ্দারের গল্পও খানিকটা তাই। তবে কিরণের মতো কোলের সন্তান নয়, তিনি বাঁচিয়েছেন সন্তানসম পোষ্যকে। স্বামী, কন্যাসন্তান ছাড়াও তাঁর পরিবারের সদস্য পাঁচটি পথকুকুর। দু’বেলা তাদের খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি।

    বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে রাত জাগে ওই সারমেয় বাহিনী। কয়েক দিন আগে নিশুতি রাতে তাদের চিল চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় দীপশিখার। বিপদের গন্ধ আঁচ করে ঘুম চোখে উঠে চলে আসেন বারান্দায়। দেখেন, একটা আস্ত চিতাবাঘ পাঁচিল টপকে তাঁর উঠোনে ঢুকে সাদাকালো পোষ্যের ঘাড় কামড়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া ওই পোষ্যর আর্তি শুনে মুহূর্তের জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েন দীপশিখা।

    সাহস আর মনের জোরে রাত দু’টোয় গেটের তালা খুলে ওই শিকারি লেপার্ডের পিছু ধাওয়া করেন। মাকে বিছানায় না-পেয়ে তখন কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে তিন বছরের কন্যা। সেদিকে খেয়াল না-করে পোষ্যের প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন মহিলা। লেপার্ডটি যেই পাঁচিল টপকাতে যাবে, ঠিক তখনই হাতের সামনে পাওয়া আধলা ইট তুলে নিয়ে দীপশিখা ছুড়ে মারেন চিতাবাঘের মাথায়।

    আচমকা আঘাতে শিকার ছেড়ে পালিয়ে যায় সে। দীপশিখা ছুটে গিয়ে বুকের মধ্যে জাপটে ধরেন ওই মরণাপন্ন সারমেয়কে। রাতেই শুরু করেন চিকিৎসা। আপাতত সে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে।

    রাত দু’টোয় ঘরে শিশুকন্যা, দুয়ারে লেপার্ড, এতটুকু ভয় করল না? মহিলা বলেন, ‘আসলে ওরা পথকুকুর হলেও আমার সন্তানের থেকে কোনও অংশে কম নয়। চোখের সামনে আমার আদরের পোষ্যকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। তখন মাথায় আর অন্য কিছুই আসেনি। পরে বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নিজেরই ভয় লেগেছে। সত্যিই তো যদি কিছু হয়ে যেত। তবে ওর প্রাণ তো বাঁচল। এটাই বা কম কিসের!’

    ঘটনার কথা জেনে রীতিমতো স্তম্ভিত জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও প্রবীণ কাসোয়ান। তিনি বলেন, ‘অসম্ভব সাহসের পরিচয় দিয়েছেন ওই মহিলা। তবে প্রাণের ঝুঁকিও কিন্তু কম ছিল না। যে কোনও মুহূর্তে বড় বিপদ ঘটতে পারত।’

    গ্রামের অনেকে অবশ্য তাঁকে ‘কাঁচি বেদেনি’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবদুল মাঝির গল্পে নধর পাঁঠাকে বাঁচাতে কুমিরের পিঠে চেপে বসেছিলেন কাঁচি বেদেনি। দা দিয়ে কুমিরকে পোঁচ দিতেই ওই পাঁঠাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সে। পোষ্যকে বাঁচাতে জীবন বাজি রেখে দীপশিখাও যে তাই করেছেন।

  • Link to this news (এই সময়)