মিষ্টিমুখ। এই শব্দবন্ধের সঙ্গে বাঙালির নাড়ির যোগ। শুভ সংবাদ হোক কিংবা সুখবর, মিষ্টিমুখেই উদযাপন করে বাঙালি। শেষপাতে মিষ্টির আয়োজনও বোধ হয় সেখান থেকেই। কিন্তু প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের খবর, কোনও দিক থেকেই সু সংবাদ নয়, কারও কাছেই নয়। সুখকর তো নয়ই। আর তাকেই যদি মিষ্টির মোড়কে হাজির করা হয়? ব্যাপারটা খুব একটা ‘বোধগম্য’ হয়নি অধিকাংশের কাছেই। সমালোচনাই হচ্ছে বেশি।
একদিকে ‘যোগ্য'। আর একদিকে ‘অযোগ্য’। দু'ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে গোটা বঙ্গ সমাজ। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা আপাতত স্কুলে যেতে পারবেন। ছাত্রছাত্রীদের পড়াবেন। তবে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর এখনও মেলেনি। এর মধ্যেই ‘যোগ্য', ‘অযোগ্য’ মিষ্টি তৈরি করেছে বিতর্ক।
হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। ক্ষীরের কড়া পাকের মিষ্টি সন্দেশ। রেকাবের উপর পাশাপাশি রাখা। দেখতে গোল। তার উপর ক্ষীরের বেড়ি। উপরে বড় বড় করে ক্ষীর দিয়ে লেখা ‘যোগ্য’। আর একটায় ‘অযোগ্য’। দুটো মিষ্টি দেখতে একইরকম। শুধু রঙে তফাত। ‘যোগ্য’ লেখা হলুদ রঙের ক্ষীরে, আর ‘অযোগ্য’ বাদামিতে।
অশোকনগর স্টেশন সংলগ্ন একটি দোকানে দেদার বিক্রি হচ্ছে এই ‘যোগ্য', ‘অযোগ্য’ মিষ্টি। দাম ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে এই মিষ্টির কথা। দোকানদার কমল সাহা বলছেন, ‘যোগ্য’ সন্দেশের চাহিদাই বেশি। খদ্দেররা আসছেন, মিষ্টি কিনছেন। অনেকে শুধু এই মিষ্টি একবার চোখের দেখা দেখতে আসছেন। ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন।’
তবে বিষয়টাকে ভালো চোখে দেখছেন অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, এ কেমন আচরণ! এত মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, সেটাকে পুঁজি করে ব্যবসা! এমন কাজ উচিত হয়নি মোটেই। তবে মিষ্টির দোকানদার বলছেন, ‘আমরা তো পাশে দাঁড়াতেই চেয়েছি। যোগ্য শিক্ষকরা কাজ ফিরে পাক, আমরাও চাই।’ যে এলাকায় এই দোকান সেই এলাকাতেই একাধিক শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন।তার মধ্যে একাধিকজন ‘যোগ্য’। স্বাভাবিক ভাবেই দোকানের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
চাকরিহারাদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ মেহবুব মণ্ডল বিষয়টি জেনে বলছেন, ‘উনিও আমাদের সহযোদ্ধা। তাই তো যোগ্য আর অযোগ্য আলাদা মিষ্টি বানিয়েছেন। উনিও চান, যোগ্য, অযোগ্যদের আলাদা করা হোক। সমাজকে হয়তো এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন তিনি।’