এই সময়: ‘বড় স্বস্তি’ জানিয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘আশা করি ভুল করব না।’
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ‘অযোগ্য’দের সঙ্গে চাকরি গিয়েছিল ‘যোগ্য’ শিক্ষক–শিক্ষিকাদেরও। পরে শীর্ষ আদালতেই মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশন করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, চিহ্নিত অযোগ্য নন, এমন শিক্ষকরা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন।
তার পরেই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই সমস্যা আগামী বছর পর্যন্ত গড়াবে না। তার আগে আইনের পথেই সমাধান হয়ে যাবে বলে জানান মমতা। সেই সঙ্গেই ভুল না–করার প্রসঙ্গ টানেন তিনি। রায়ের ব্যাখ্যা এবং আইনি ব্যাপারে আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পর্ষদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট এ দিন অনুমতি দেওয়ার পরে মমতা বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আমরা দেখব যাতে চাকরিহারাদের কোনও অসুবিধা না হয়। আমরা সময় পেয়েছি। ২০২৬ পর্যন্ত বিষয়টা যাবে না। আশা করি এ বছরের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে। আশা করি আমরা ভুল করব না। আমি মানুষের কাজে ভুল করি না। নিজের কাজে ভুল করলেও মানুষের কাজে আমার ভুল হয় না।’
প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের পরে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়ে পর্ষদ জানিয়েছিল, এক লপ্তে এতজনের চাকরি যাওয়ায় রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ধাক্কা খেয়েছে। তাদের আর্জি ছিল, যাঁরা ‘অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত’ নন, আপাতত তাঁদের চাকরি বহাল থাকুক।
বৃহস্পতিবার সেই আর্জিতে সায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যাকে প্রথমে ‘সাময়িক স্বস্তি’ বলেও পরে ‘বড় স্বস্তি’ বলে উল্লেখ করেন মমতা। এ দিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা স্কুলে যাবেন। এটা বড় স্বস্তির খবর। একটা স্বস্তি হলে তার উপরে ভবিষ্যতের স্বস্তি নির্ভর করে।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীদের চাকরি যাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সরকার যোগ্য শিক্ষকদের পাশে সব সময়ে আছে। তাঁরা যাতে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, তা আমরা দেখব।’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘প্রথমে যোগ্যদের পাশে সরকার দাঁড়াবে। তার পরে কারা অযোগ্য, তাঁদের কেন অযোগ্য বলা হচ্ছে, সেটাও খতিয়ে দেখবে।’ বৃহস্পতিবার মমতা বলেন, ‘আগের রায়ে আদালত বলেছিল, বাতিল হওয়া শিক্ষকদের বেতন দেওয়া যাবে না। সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা করছিলাম। বিকল্প পথের সন্ধান করছিলাম। এ বার তাঁদের বেতন দেওয়া যাবে।’
‘অযোগ্য’ নন, এমন শিক্ষকদের কাজে ফিরতে বললেও চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘আইনের বিষয়টি আমি দেখে নেব। আমাদের আইনজীবীরা দিল্লি থেকে ফিরুন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে বলেছি, ওঁদের সঙ্গে পরামর্শ করতে।’
শিক্ষাকর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘চিন্তাটা আমার উপরে ছেড়ে দিন। তাড়াহুড়ো করবেন না। সরকারের উপরে আস্থা রাখুন, ভরসা রাখুন।’ এর পরে ফের স্পষ্ট করে দেন যে, আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।